নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর রায়পুরায় প্রত্যন্ত অঞ্চল নিলক্ষার টেঁটাযুদ্ধের সর্দার সুমেদ আলীর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১০টি মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকার সত্যেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি দেশে জনপ্রিয় আইপি টিভি চ্যানেল জোনাকী টেলিভিশনের অনলাইন ভার্ষণে, নরসিংদীর স্থানীয় সাপ্তাহিক আমরা নরসিংদীবাসীসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রিন্ট ও অনলাইনে টেঁটাযুদ্ধের সর্দার সুমেদ আলীকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা ফেইজবুকের বেশ কয়েকটি গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী তুলেন ফেইসবুক সমালোচকরা। শুধু ফেইজবুকের পাতায় নয় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে কাপে ধোয়া তুলছে টেঁটা সর্দার সুমেদ আলী। যা বর্তমানে টক অব দ্যা নরসিংদীতে পরিণত হয়েছে।
যাকে নিয়ে এতো আলোচনা সমালোচনার পরেও তাকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছেনা আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। আর এ কারণেই অনেকে মনে প্রশ্ন উঠে ‘সুমেদ আলী যাতে করে গ্রেফতার না হয় বা তাকে গ্রেফতার না করা হয়। এ জন্যে কি তবে কোন অদৃশ্য তৃতীয় শক্তি কাজ করছে।
জানা যায় নরসিংদী শহরের শাপলাচত্ত্বরি এলাকার একটি বাসায় নিয়মিত তার বাহিনী নিয়ে গোপন বৈঠন করছেন এ সুমেদ আলী। টেঁটাযুদ্ধের সর্দার এ সুমেদ আলী এখন টেঁটার সাথে যোগ করেছেন অবৈধ অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরণ দ্রব্য। প্রায় সময় তার বাহিনীকে এ সব অবৈধ অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরণদ্রব্যে সজ্জিত করে নিলক্ষায় চোরা-গোপ্তা হামলা চালিয়েছেন। শান্ত নিলক্ষাকে অশান্ত করে তুলছেন। কিন্তু গ্রামবাসীর প্রতিরোধের কারণে প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছেন তার বাহিনী। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পূর্নরায় হামলার জন্যে শহেরর বাসাইল মহল্লার শাপলাচত্ত্বে একটি বাসায় ও ভেলানগর বসে প্রায় সময় তার বাহিনী নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। তার পরও রহস্যজনক কারনে সুমেদ আলীসহ তার বাহিনীর সদস্যরা থাকছেন পুলিশের ধরাছোয়ার বাহিরে। তাই সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে এ টেঁটাযুদ্ধের সর্দার সুমেদ আলীর খুটির জোর কোথায় ?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র কিছু সংখ্যক দাঙ্গাবাজদের কারণে যুগযুগ ধরে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে নিলক্ষা ইউনিয়নের ৭টি গ্রামজুড়ে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে সমাজপতির মুখোশধারী একটি শ্রেণী। তার মধ্যে এ টেঁটাযুদ্ধের নায়ক সুমেদ আলী অন্যতম। বিবদমান দলের মধ্যে সমঝোতার নামে তারা চালান বাণিজ্য। যার ফলে অল্প সময়ে মাঝে হয়ে উঠেন টেঁটাবাজরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। বর্তমানে নিলক্ষার টেঁটাযুদ্ধ নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন ওই এলাকার এক সময়ের দিন মুজুর সুমেদ আলী। যিনি এখন নিলক্ষার কোটিপতি লাঠিয়াল সর্দার হিসেবে পরিচিতি। তার বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে পুলিশের প্রকাশিতব্য জিআর ওয়ারেন্ট তালিকায় তার নাম রয়েছে রায়পুরা থানার মামলা নং ২৫ ৯৮)১৩,বি: ট্রা: ৫০/১৪, ১৫(১২)১৬, ৩(৬)১৬, ৫৯(৮)১৭, ৪০(১১)১৮, ২(৬)১৬ ও বি: ট্রা: ১০৬/১৭ এ মামলায়। কিন্তু প্রকাশ্যে নরসিংদী শহরের এ সুমেদ আলী ঘুরে বেড়ালেও থাকছেন পুলিশের ধরাছোয়ার বাহিরে। দিন মজুর থেকে টেঁটার সর্দার: নিলক্ষা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত মন্নর আলীর ছেলে সুমেদ আলী। এলাকাবাসীর কাছে সে কথিত বাংলার ভাই বলে পরিচিত। নিলক্ষার টেঁটা সন্ত্রাসের গড ফাদার ও এলাকাবাসীর জন্য মূর্তিমান আতষ্ক সে। টেঁটাযুদ্ধ, হত্যা, চাঁদাবাজি ও দালাল বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রেই মূল হোতা এ সুমেদ আলী। শুধু তাই নয় টেঁটাযুদ্ধ নিয়ন্ত্রনে আনতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এলাকায় পৌঁছালে তাদের উপর হামলা চালায় তার নির্দেশ প্রাপ্ত ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। তাদের হামলায় তৎকালীন রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন সুমেদ আলীর স্ত্রী। পরে তৎকালীন রায়পুরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাকে এক মাসের কারদন্ড প্রদান করেন। ওই দিনই নৌ পথে পালানোর সময় ৯টি আগ্নোয়াস্ত্রসহ সুমেদ আলীর ভাড়াটিয়া ১৩ সস্ত্রাসী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তার মাত্র ১৫দিন পর আদালত থেকে জামিনে মুক্তিপায় সুমেদ আলীর স্ত্রী। এদিকে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সুমেদ আলীকে প্রধান আসামী করে সরকারী কাজে বাধা ও বিস্ফোরণ দ্রব্য আইনে রায়পুরা থানায় দুই মামলা দায়ের করেছন। বর্তমানে তা আদালতে বিচারাধিন।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি স্বার্থান্বেসী মহলের নিদের্শনায় পূর্নরায় হামলার জন্যে নরসিংদী শহেরর বাসাইল মহল্লার শাপলাচত্ত্বে একটি বাসায় বসে প্রায় সময় তার বাহিনী নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। ইতোমধ্যে গত ২ জুন নরসিংদীর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সুমেদ আলীর এক অনুসারি রাজিব। এখনও ধরাছোয়ার বাহির রয়েছেন সুমেদ আলীসহ তার বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি এ সুমেদ আলীসহ তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই টেঁটাযুদ্ধের ন্যায়পত্ত্বের মূল নায়ক কারা কারা এবং অবৈধ অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরনের অর্থযোগান দাতা কে, তা বের হয়ে আসবে। এর সাথে অশান্ত নিলক্ষা হয়ে উঠছে শান্ত। ভুলে যাবে মরণ নেশারমতো অভিশাপ্ত এ টেঁটাযুদ্ধ।
এদিকে রায়পুরা থানা পুলিশ একটি মহলের সাথে আতাত করে সুমেদ আলীকে গ্রেফতারের কোন চেষ্টা না চালিয়ে ওল্টো গ্রেফতার করছে নিরীহ লোকদের।গত ৩/৪ দিন আগেও নিলক্ষার গোপীনাথপুর গ্রাম থেকে কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। যাদের কারো নামেই থানায় কোন মামলা নেই।বরং তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশ যাকে সাথে নিয়ে যায় তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইনামুল হক সাগর জানান, সুমেদ আলীকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানিমূলক গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, এমনটা হবার হবার কথা নয়।গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের সন্দেহ ভাজনও হতে পারে।
পরে এ বিষয়ে কথা বলতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সুমেদ আলীকে গ্রেফতার করতে নরসিংদী জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মূলত পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে থাকে সে। আমরা তথ্য প্রয্যূক্তির মাধ্যমে শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করতে পারব। শুধু সুমেদ আলী কেন টেটাযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। টেটাযুদ্ধের এই অপসংস্কৃতি নির্মূলে নরসিংদী জেলা পুলিশ বদ্ধ পরিকর।
Leave a Reply