ডেস্ক রির্পোট
সরকারের পক্ষ থেকে করোনার সার্বিক পরিস্থিহি পর্যাবেক্ষন করা হচ্ছে। সরকার আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এজন্য পাশাপাশি সাধারণ ছুটিতে অথবা ছুটি না থাকলে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি খাতের সার্বিক লাভ-ক্ষতির যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে আবারও ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণার চিন্তাভাবনা করবে সরকার।
এদিকে দেশে করোনা মহামারী বেড়ে যাওয়ায় পুরো দেশকে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন করার দাবি জানিয়েছেন ৩৩৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যদি দেখি আমাদের ব্যাপক অবনতি ঘটছে তাহলে তো আমাদের (ছুটিতে যাওয়া ছাড়া) বিকল্প কিছু থাকবে না। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেয়ার জন্যই লকডাউন খুলে দেয়া হয়েছে। মানুষ যেন মাস্ক পরে নিরাপদ দূরত্বে থাকে, আমরা সেটা বলছি। মানুষ যখন এটা করতে ব্যর্থ হবে এবং সংক্রমন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তখন তো ঘরে থাকা ছাড়া উপায় আর কোন থাকবে না।’
এদিকে, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অনুযায়ী সারাদেশকে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে।
জানা গেছে, যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ বেশি সেসব এলাকাকে লাল বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। ওই এলাকার লোকদের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। বাইরে থেকেও রেড জোনে লোকদের প্রবেশ সীমিত করার উদ্যোগ নেবে সরকার। আর যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ কম, সেসব এলাকাকে হলুদ বা ইয়েলো জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এসব এলাকার আক্রান্তদের ঘরবাড়ি লকডাউন করে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো হবে। আর যেসব এলাকায় এখনো করোনা রোগী পাওয়া যায়নি, সেসব এলাকায় যাতে বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, এখনো জোন করা হয়নি। ঢাকা, নারায়াণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে। যদি কোনো জোন রেড হয় সেগুলো রেড করা হবে। তবে কোন এলাকা কোন জোনে পড়বে তা নির্ধারণ করবেন বিশেষজ্ঞরা।
এলাকাভিত্তিক লকডাউনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জোনের মাধ্যমেই সব করা হবে। যেখানে বেশি সংক্রমিত হবে সেখানে কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা যেভাবে পরামর্শ দেবেন সেভাবেই আমরা কাজ করবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রতিদিন টেস্ট বাড়ছে, রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। এর জন্যই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা একটা পরিকল্পনা তৈরি করে দেবো। এ বিষয়ে নীতিগতভাবে আলোচনা হয়েছে। এ পরিকল্পনা সিটি কর্পোরেশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী জোন ভাগ করা হবে। যে জোনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হবে, সেই এলাকাটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। বিশেষজ্ঞরা যেভাবে পরামর্শ দেবেন আমরা সেভাবে কাজ করবো।
এদিকে সাধারণ ছুটি বাড়ানো বা প্রয়োজনে কারফিউ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, দিন দিন করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে। লঞ্চ, বাস, মার্কেটগুলোতে গেলে মনেই হয় না দেশে এ ধরনের একটি মহামারী আছে। ছুটি তুলে নেয়ার পর রাস্তাঘাটে একজন আরেকজনের ওপর এসে পড়ছে। পরিবহন ও বাজারে গেলে মানুষ গায়ের ওপর গা দিয়ে বাজার করছে। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরো বাড়ছেই। আল্লাহ না করুন- করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে সরকারকে সাধারণ ছুটির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজনে লকডাউন বা কারফিউ দেয়া যেতে পারে। শুধু লকডাউন দিলেই হবে না, তা জনগণকে মানাতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। মোট কথা লকডাউন বা কারফিউ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ৬৬ দিনের ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ, ট্রেন) চালু হয়। তবে কমেনি করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার। বরং দিন দিনই বাড়ছে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। বুধবার (৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাসবিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে বলা হয়, দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৭৪৬ জনের। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ১৪০ জন।
জোনাকি টেলিভিশন/এসএইচআর/০৪-০৬-২০ইং
Leave a Reply