মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
দীর্ঘদিন শান্ত থাকার পর আবারও নরসিংদীর শান্ত চরাঞ্চল হঠাৎ করে অশান্ত হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেলে সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন চরদীঘলদী ইউনিয়নের অনন্তরামপুর গ্রামের জয়নাল মিয়ার বাড়ি থেকে টেঁটা উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে সেই আশঙ্কা দেখে দিয়েছে।
একসময় স্থানীয় তুচ্ছ ঘটনা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ত চরদীঘলদী ইউনিয়নের চরবাসী। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে টেঁটা বল্লমসহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত তারা। এতে প্রাণহানিসহ বাড়িঘরে পাল্টাপাল্টি হামলা, গবাদি পশু, মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতো। এতে কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হতো। যুগযুগ ধরে চলে আসা এসব সংঘর্ষময় পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মাধবদী থানা পুলিশ বিবাদমান রাজনৈতিক গ্রুপ গুলোকে একত্রিত করে সকলের টেঁটা,বল্লম ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র স্বেচ্ছায় প্রশাসনের কাছে জমা দেয়ার মাধ্যমে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এতে করে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার চরদীঘলদী ইউনিয়নের অনন্তরামপুর গ্রামের জয়নাল মিয়ার বাড়ি থেকে নতুন করে টেঁটা উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে টেঁটা জড়ো করার উদ্দেশ্যেই বা কি, তবে কি শান্ত চরে আবারও অশান্ত করে তুলতে সংঘাতের চক্রান্ত চলছে ? এসব প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসির কাছে জানতে চাইলে চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, নরসিংদীর চরাঞ্চলে টেঁটার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। একটা সময় নদ-নদীতে মাছ ও কচ্ছপ শিকারের জন্য ব্যবহৃত এই টেঁটা এখন চরাঞ্চলে মানুষ শিকারের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য ক্ষমতাসীনদের একটি গ্রুপ সবসময় এলাকায় অবস্থান করলেও প্রতিপক্ষ গ্রুপকে বাড়িঘর ফেলে এলাকা ছাড়া হয়ে ফেরারী জীবন যাপন করতে হয়। কিন্তু নরসিংদী জেলা ও মাধবদী থানা পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের এলাকার শওকত আলী গ্রুপ এবং তার প্রতিপক্ষ সুলতান আবুল মনসুর গ্রুপকে একত্রে মিলিয়ে দিয়ে এলাকায় শান্তি স্থাপন করেন। ফলে শওকত আলী গ্রুপ তাদের প্রতি পক্ষ সুলতান আবুল মনসুর ও তার সমর্থকদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের শত্রুতা ভূলে তাদের আপন করে এলাকায় বসবাস শুরু করে। কিন্তু আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি গ্রুপ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এলাকার কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদকসেবী,ডাকাত ও কুচক্রী মহলের সমন্বয়ে অনন্তরামপুরের জয়নালের বাড়িতে টেঁটা,বল্লমসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করতে থাকে। যা এলাকার জনমনে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
এব্যাপারে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাধবদী থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলে তারা তা টের পেয়ে অধিকাংশ মালামাল অন্যত্র সরিয়ে ফেললে ও পুলিশ প্রায় শতাধিক টেঁটা উদ্ধারে সক্ষম হয়।
এব্যাপারে অভিযুক্ত জয়নাল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে টেঁটা উদ্ধারের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমাদের চরাঞ্চলে কখন কি ঘটে যায় বলা মুশকিল তাই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের এসব জিনিস মজুদ রাখতে হয়।
৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টেঁটা উদ্ধারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা আজ ১৪ মাস যাবৎ এলাকায় ঢুকতে পারি না। শুনেছি পুলিশ এখান থেকে ৫০/৬০ পিছ পুরাতন টেঁটা উদ্ধার করেছে। আমাদের এলাকার ঘরগুলো তল্লাশি করলে প্রত্যেকের ঘরেই টেঁটা পাওয়া যাবে।
চরদীঘলদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সুলতান আবুল মনসুরকে পরিষদে না পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি ও টেঁটা উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এব্যাপারে কোন ধরনের বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
চরদীঘলদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, শান্ত চরে নতুন করে টেঁটা উদ্ধারে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এখানে কোন প্রকার মারামারি, হানাহানি ও চরাঞ্চলবাসীর প্রাণঘাতী টেঁটা যুদ্ধ না থাকায় সকলে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। কিন্তু হঠাৎ টেঁটা মজুদের ঘটনায় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ইতিপূর্বে ও এই গ্রুপটি এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির জন্য টেঁটা ও ককটেল জড়ো করে। আমরা খবর পেয়ে তাদেরকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করি। আমাদের প্রাণের চরাঞ্চলে আর কোন টেঁটা যুদ্ধ চাই না।
চরদীঘলদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও চরদীঘলদী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আজগর আলী বলেন, পুলিশের শান্তি আলোচনার পর থেকে আমাদের এলাকার সকলে পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ ভুলে মিলেমিশে বসবাস করছি।
কিছু লোক আমার বাজারকে রাতের আঁধারে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এব্যাপারে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহীন বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ চরাঞ্চলে পুনরায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ুক এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। যারা পুনরায় অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মাধবদী থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মোঃ সৈয়দুজ্জামান কে থানায় না পেয়ে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও কোন সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাধবদী থানার এস আই সানোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অনন্তরামপুরের জয়নালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে (৫০-৬০)টির মতো টেটা উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
Leave a Reply