ডেস্ক রির্পোট
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে ধরলা এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রামে সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বন্যার পূর্বাভাসের আগেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি। বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা, গঙ্গাধর ও দুধকুমারসহ সংকোষ নদীর পানিও। ফলে চরাঞ্চল এবং অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
শুক্রবার (২৬ জুন) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এরই মধ্যে পানি উঠেছে অনেক বাড়িঘরে । চরাঞ্চলের সব বাড়ির চারদিক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নৌকা আর ভেলায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হচ্ছে তাদের। নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পানিবন্দি মানুষের এ তথ্য জানা গেছে।
বন্যায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় পরিবারের লোকজনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। আগাম বন্যার ফলে চরাঞ্চলের আবাদি ফসলাদি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে তিল, চিনা বাদাম ও সবজি ক্ষেতের। অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করে বড় ধরনের ক্ষতি পড়ে দিশেহারা কৃষক।
এদিকে, সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সিপের চর, খাসেরচরসহ বেশ কয়েকটি চরের মানুষ করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খাসের চর এলাকার কৃষক বাচ্চু ও সামাদ বলেন, ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে ৭ একর জমিতে তিল, চিনা বাদাম লাগিয়েছে। বন্যায় সব শেষ।
সিপেরচরের হোসেন কবিরাজ বলেন, জমির ধান দিয়ে সংসার চলে। এবার আগাম বন্যায় আউশ ধান, চিনা বাদাম ও ভুট্টা সব নষ্ট হয়ে গেছে।
সিপেরচরের ২০টি নদীভাঙা পরিবার গত ৩ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাদের অনেকের অভিযোগ এ পর্যন্ত কেউ ত্রাণ দেয়নি। তারা বলেন, এ বন্যায় আমাদের অবস্থা দেখার কেউ নেই। এবার চেয়ারম্যান-মেম্বার ভোট চাইতে এলে ছাড় দিয়ে কথা বলব না।
জানা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের ইন্দ্রগড়, ধনিরামপুর, শৌলমারী, জালির চর, কাইয়ের চর, বল্লভের খাস ইউনিয়নের ইসলামের চর, চর কৃঞ্চপুর, কামারের চর, নারায়ণপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ চরাঞ্চল, নুনখাওয়া ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ভূরুঙ্গামারী, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুরসহ উলিপুরের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবিন্দ হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকার চলতি মৌসুমের ফসলি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে পাট, ভুট্টা ও সবজির। এ পর্যন্ত দুই উপজেলার পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। যাতে ৩৭ হেক্টর আউশ, ৯৩ হেক্টর তিল এবং ৬ হেক্টর মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি বন্যাদুর্গতদের কাছে যেতে। অপ্রতুলতার কারণে অনেকের কাছে ত্রাণ পৌঁছায়নি। এজন্য অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসালম বলেন, ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ও পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় হঠাৎ সব তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত পানির উচ্চতা ওঠানামা করবে। পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। এর মধ্যে কিছুটা কমার সম্ভাবনাও রয়েছে।
জোনাকী টেলিভিশন/এসএইচআর/২৬-০৬-২০ইং
Leave a Reply