নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই করোনাভাইরাসের ঝুকি নিয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াসহ (কোভিড-১৯) সম্পর্কে তৃনমূল জনগোষ্ঠীকে সচেতনতা করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। যার ফলে এই কর্মসূচিতে নিয়োজিত দেশের সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীদের মাঝে নানান উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে সেবা দিতে গিয়ে দেশে বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের মধ্যে প্রায় ২৫ জনের উপরে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ৭ এপ্রিল চালু করা হয় সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচী (ইপিআই)। এ কর্মসূচীর আওতায় দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রের কর্মসূচি এককভাবে স্বাস্থ্য সহকারীদের উপর ন্যস্ত করা হয়। টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহকারীগন বর্তমানে ইপিআইয়ের আওতায় মা ও শিশুকে যক্ষ্মা, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফুয়েঞ্জার, নিউমোনিয়া ও হাম-রুবেলাসহ ১০টি সংক্রামক রোগের নিয়মিত টিকা দিচ্ছেন।
এতে করে এ তৃনমূল স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের অর্জনেই আজ বাংলাদেশ টিকাদানে বিশ্বের রোল মডেলে পরিনত হয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূষিত হয়েছেন “ভ্যাকসিন হিরো”। তাছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের বিভিন্ন অবদানের জন্য পেয়েছেন আরো ৭টি পুরষ্কার। অর্জন করেছেন এমডিজি-৪ এবং এসডিজি-৫ অর্জনের দ্বার প্রান্তে।
এছাড়া ২০১৩ সালে ২৫ জানুয়ারী এই স্বাস্থ্য সহকারীরাই ৯ মাস থেকে ১৫ বছর কম বয়সের ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুকে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা সফল ভাবে প্রদান করে। আর এ সব টিকা প্রদানের জন্য বাংলাদেশর ৬৪ জেলার নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী। একজন স্বাস্থ্য সহকারী টিকা প্রদানের পূর্বে সারা মাস সরকারী ছুটি ব্যতিত রৌদে-বৃষ্টিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে মা ও শিশু রেজিস্টেশন করে টিকা প্রদানসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য শিক্ষা দিচ্ছেন।
দেশের বর্তমান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মূহুর্তেও সরকারীরের নিদের্শনা মোতাবেক প্রান্তিক জনগোষ্টিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত এই স্বাস্থ্য সহকারীরা।
এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে যেখানে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকারের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ঘোষনা করেছেন সাধারণ ছুটি। আর সে অবস্থায় স্বাস্থ্য সহকারীরা মাঠে থেকে নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে পরিবার ও সন্তানদের ছেড়ে দেশের স্বার্থে জনগনকে স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ মা ও শিশুকে টিকাদান করছেন।
বর্তমান পরিস্থিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা বিদেশ ফেরতদের তথ্য সংগ্রহ করে স্ব স্ব^ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রকোপ দেশে ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকে তারা বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার জন্য অনুরোধ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তারা হোম কোয়ারান্টাইন অবস্থায় আছে কিনা তার ফলোআপও করছেন এ স্বাস্থ্য সহকারীরা। এছাড়া জ্বর,সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগী সনাক্ত করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করছেন এবং সন্দেহ ভাজন করোনারোগীর নমুনা সংগ্রহে উপজেলা মেডিকেল টিমকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু তাদের একটি মাস্ক ছাড়া (নিজের অর্থায়নে ক্রয় করা ) আর কিছুই নেই।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা চরম ঝুঁকির মধ্যে আছেন। ইতোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জ সদর, যশোরের মনিরামপুর, গফরগাঁও,কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী সদর, রায়পুরা, শিবপুর, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় স্বাস্থ্য পরিদর্শক,সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারী মিলে প্রায় ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, স্বাস্থ্য সহকারীরা সিটি করপোরেশনের বাইরে সারা দেশে এক লাখ ২০ হাজার টিকাদান কেন্দ্রে টিকা প্রদান করেন। কেন্দ্রগুলো অস্থায়ী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তি বিশেষের বাসাবাড়িতে অবস্থিত। বর্তমান পরিস্থিতে এ অবস্থায় ওই সব বাড়ির লোকজন বহিরাগতদের সমাগমে বিব্রত বোধ করছেন। তার পরও বাড়ীর মালিকে বুঝিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝুঁকি নিয়ে এ সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীরা এই মুহূর্তে টিকাদান কর্মসূচিসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তারা তৃনমূল জনগনের সেবা দিতে মাঠে আছেন ও থাকবেন বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ হেলথ্ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ফাহিম সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মারাত্মক ঝুঁকিতে আছি। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশের সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী করোনামোকাবেলায় সুরক্ষা সরঞ্জাম সল্পতা মধ্যদিয়েও মাঠে সেবাদান চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এ সময়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের করোনায় ঝুঁকি আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিমাসহ সরকার ঘোষিত প্রণোদনা আমাদের প্রাপ্য এবং আমরা যেন এ থেকে বঞ্চিত না হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ হেলথ্ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতে ‘ইপিআই কেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীরা নিরাপদ দূরত্ব তিন ফুট বজায় রেখে ইপিআই কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। তার পরেও জীবন ঝুকি নিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর সাথে সাথে জনগণকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করছেন। সেজন্য তাদের নিরাপত্তা বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যেন সুদৃষ্টি দেন এবং আমাদের কাজের সঠিক মুল্যায়ন করেন।
Leave a Reply