1. mostafa0192@gmail.com : admin2024 :
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

কিছু প্রশ্ন আমাদের মানসিকতার বিরুদ্ধে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০২০
  • ২৬০ বার পঠিত

মো. মাহবুব আলম
১। দিনমজুর বা প্রতিদিনের আয়ের উপর নির্ভরশীল এমন মানুষগুলোর কথা ভাবলেই গা শিউরে উঠে। একদিকে সবার মতো তারাও নিশ্চিত না কবে থেকে কাজে যেতে পারবেন? তবে তাদের মধ্যে আরেকটি অনিয়শ্চতা আছে-আর তা হলো তাদের খাদ্যের সংকটে অথবা তাদের চিকিৎসার প্রয়োজনে যে ধরনের সহযোগিতা এখন হচ্ছে (সরকারী বিশেষ করে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পর্যায় থেকে) তা কতদিন চলবে? কারণ পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হতে বেশিদিন প্রয়োজন হয় তাহলে এই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো কী করবে? একদিকে অন্য সবার মতো তাদেরও জীবনের প্রশ্ন! তবে তাদের প্রশ্ন দুটি। একটি হলো রোগ হলে তাদের উপায় কী? অন্যটি হলো খাদ্য সংকটে তাদের উপায় কী? এমন অবস্থায় অবাক হয়ে যাই যখন এখনও অনেক পরিবার কোন সহযোগিতাই পায়নি। অথচ সারাদেশ লকডাউনের সময় তো কম হলো না! আমরা এখনো অনেকেই বুঝতেই পারিনি কী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও। আমরা কিছুক্ষণের জন্য চিন্তা করতে পারছি না কী হতে যাচ্ছে অবশেষে। আর কেউ কেউ তো সাহায্য দেওয়ার নামে সেলফি তুলতে তুলতে মেমোরিটাই ফুল করে ফেললেন! এ অবস্থায় হয়তো তাদের জন্য নতুন মেমোরি কিনতে কয়েকটা দোকান খুলে দেওয়া উচিত!! আমাদের মূল্যবোধের পরিচয় দেওয়ার এরচেয়ে উপযোগী কোন সময় আসবে কি না অথবা নতুন কোন সময় আমরা পাব কি না তা একমাত্র স্রষ্টাই বলতে পারেন। আমাদেরকে কিছুটা ভাবা উচিত।
২। অন্যদিকে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। এর মধ্যে এ ভাইরাস থেকে ‘মুক্তির উপায়’ বাতলে দেওয়ার নামে ছড়ানো হচ্ছে নানা গুজব। এ যেন মরার উপর খাড়ার গা। হতাশ আর আবেগাপ্লুত মানুষ জীবনের প্রয়োজনে হয়তো কখনো কখনো মেনে নিচ্ছেন অথবা বিশ্বাস করছেন সেসব গুজব। এমনই এক গুজব ছড়ানো হয় হবিগঞ্জে। আর তা হলো ভূমিকম্প ও কেয়ামত আসার গুজব। এভাবেই চট্টগ্রামের একটি ফেসবুক আইডিতে বলা হয়েছিল, ‘করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে রাত ১০টায় সারা দেশে আজান দিতে হবে।’ বিষয়টি দেখে ফেসবুকে শেয়ার করে ও মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেওয়া হয় হবিগঞ্জে। জেলায় বৃহস্পতিবার রাতের ওই সময়ে শুরু হয় আজান দেওয়া। পরে চট্টগ্রামের যে ব্যক্তির (হুজুর) নামে এই গুজব রটানো হয় তিনি ফেসবুকে লাইভে এসে আজান দেওয়ার নির্দেশনার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর রাত ১২টায় গুজব ছড়ায়, ভূমিকম্প ও কেয়ামত আসছে। এতে জেলাজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আতঙ্কিত মানুষজন ঘরবাড়ি থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। এ সময় মুসলমানরা ‘আল্লাহ আকবার’ আর হিন্দুরা কীর্তন ও উলু ধ্বনি দেয়। পরে ঢাকাফেরত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা যুবকরা রাস্তায় নেমে উচ্চঃস্বরে মিছিল করতে থাকে। এতে সাধারণ মান্ষু আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ রকম চলে গভীর রাত পর্যন্ত। আবার কালজিরা, গোলমরিচ আর আদা পিষে খেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে না মানুষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে। এতে গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে শিল-পাটায় এসব বেটে খাওয়ার ধুম পড়ে। অনেকেই এসব কিনতে ভিড় করে দোকানে। গতকাল শুক্রবারও বিভিন্ন বাড়িতে কালজিরা-গোলমরিচ-আদা বেটে খেতে দেখা যায়। শহরের রঘুনাথপুর মহল্লার শরিফুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, ওই কথা শোনার পর তিনি, তাঁর বাড়ির আশপাশের সবাই ও বাপের বাড়ির লোকজন ওই সব বেটে খেয়েছেন। অন্যদিকে রংপুরে একটি ক্লিনিকে এক নবজাতক পাঁচ মিনিট বেঁচে ছিল। তখন ওই শিশু নাকি বলেছে, ‘কালিজিরা, আদা, লবঙ্গ ও এলাচ একত্রে পানিতে গরম করে খেলে করোনাভাইরাস আক্রমণ করবে না। এসব খেতে হবে রাত ১২টার আগেই।’ বৃহস্পতিবার রাতে এমন গুজব মোবাইল ফোন, ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলাসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় হয়। গুজবের ফাঁদে পড়ে রাত জেগে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এসব খায়।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন পোস্ট ও মেসেজ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আবার পরিকল্পিতভাবে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে অকার্যকর এবং ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স¤প্রতি ফেসবুকে একটি আইডি থেকে গুজব রটানো হয়, ‘চীনের বিখ্যাত করোনাভাইরাস বিশেষজ্ঞ মৃত্যুর আগে বলে গেছেন তিনটি কেমিক্যাল করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে। এই তিন কেমিক্যাল চায়ের মধ্যে রয়েছে। কেউ দিনে তিন কাপ চা খেলে তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই এবং হলেও কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে।’ আরেক আইডি থেকে বলা হয়েছে, ‘গফরগাঁওয়ের পুখুরিয়ায় এক নারীর সদ্যজাত শিশু হঠাৎ কথা বলে জানায়, কালিজিরা, লং-আদা খেলে করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগ ভালো হয়ে যায়। পরে শিশুটি মারা যায়।’ এক আইডি থেকে বলা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৪০ মিনিটে কেউ বাইরে থাকবেন না। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে বাতাসে জীবাণুনাশক ছিটানো হবে।’ আরেক আইডি থেকে বলা হয়, ‘সন্ধ্যায় নারিকেলগাছে পানি দিলে করোনাভাইরাস সৃষ্ট রোগ ভালো হয়ে যাবে।’ এ ছাড়া ‘সৌদি আরব নাকি অন্ধকার হয়ে গেছে? ইমাম মাহাদী নাকি আসার সময় হয়ে গেছে?’ এ রকম কথায় সয়লাব ফেসবুক। এতে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের সতর্কতা আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে।
৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের হে বঙ্গজননী/রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি’। আমরা মনে হয় এখনো আমাদের মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার চির প্রত্যাশিত অবস্থানে আসতে পারিনি। আর তাই আমাদের বিবেকের কারাগারে একটি সহজ প্রশ্নই আমরা করতে পারি না। আর তা হলো ‘আদৌ আমরা কী মানুষ হতে পেরেছি?’ আমাদেরকে সবার আগে মানুষ হতে হবে। অবাক হবার মতোই বিষয় সারাবিশ্ব যখন এক করোনা ভাইরাসে থমকে দাঁড়িয়েছেন বড় বড় অট্টালিকার অফিস আদালত ছেড়ে মানুষ যখন তার ছোট্ট কুটিরে কিংবা আপন আলয়ে স্বজনের পাশে গিয়ে বসতে বাধ্য হয়েছে তখনও তথাকথিত গুজব ছড়ানোর মধ্য দিয়ে আমরা অলৌকিক আনন্দ পাচ্ছি। আসলে এ আনন্দের মানে কী? তারও কোন উত্তর এখন পর্যন্ত আমাদের কারোরই জানা নেই। যারা এমন নোংরামিতে ব্যস্ত তারা নিজেরাও কী জানে-মানুষকে বিপদে ফেলে অথবা অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে কী আনন্দ বা কী লাভ? হাসপাতালগুলোতে এখন ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। স্বয়ং ডাক্তাররা নিজেরাই বিপদে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের এত ভালো অবস্থা নেই যে-আমরা আমাদের ডাক্তারদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব! যেখানে ইতালির মতো একটি দেশ কিংবা চীনের মতো একটি তাদের সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা থাকার পরেও উঠে দাঁড়াতে পারছে না সেখানে আমাদের অবস্থা কী হবে তা ভাবাই কঠিন। আমার মনে হয় সবার আগে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সবাই মিলেই যে একটি দেশ-সবাই মিলে সুন্দরভাবে বাচাই যে জীবন সবার আগে এই ধারণাটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সবাই বাচলে হয়তো আবারও সড়কে যানবাহনের শব্দে কিংবা মানুষের কোলাহলে আবারও মুখোরিত হবে সারাদেশ। আবারও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ ছুটে চলবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া, দক্ষিণ তালপট্টি থেকে উত্তর তামাবীল পর্যন্ত। আর এখন আমাদের ছুটে চলা প্রয়োজন সবার প্রয়োজনে সবার হাত সামনে রেখে। সামনে নতুন দিনের প্রত্যাশায়।

লেখক: মো. মাহবুব আলম
প্রতিষ্ঠাতা: উন্মোচন সাহিত্য পরিষদ-উসাপ
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট কাউন্সিল
০১৭৫০২০৮৯২৭, onmochon@gmail.com

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Jonaki Media and Communication Limited
Design By Khan IT Host