গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মাঠ জুড়ে ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। দিগন্ত জোড়া মাঠে বিরাজ করছে থোকা থোকা হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধ কর দৃশ্য। আর বিশাল এ মাঠটাকে পুজিঁ করে মৌ-খামারীরা খেতের পাশে সারিবদ্ধ ভাবে বসিয়েছেন মৌ বক্স। সেখান থেকে ঝাঁকে ঝাঁকেমৌ-মাছির বসছে সরিষার হলুদ ফুলে। মৌ মাছির মধু আহরণের মাধ্যমে পরাগাগনের ফলে কৃষকদের সরিষা উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে পাশাপাশি মধু সংগ্রহ করে বদলে যাচ্ছে মৌ-খামারীদের ভাগ্যের চাকা।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিস সুত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। শষ্য বহুমুখী করণে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে কৃষি অফিস দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ। এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রায় চেয়ে অধিক সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সরোজমিন গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা, রুহাই ও বামনবাড়িয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সরিষা বিস্তৃত মাঠে ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন। খেতের পাশেই মৌ-খামারীরা বাক্স পেতে বসেছেন। মৌ মাছিগুলো সরিষাফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের ভেতর ঢুকছে আর বের হচ্ছে।
কথা হয় বিলশা ও রুহাই গ্রামে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন নাজিরপুর ইউনিয়নের জুমাইনগর গ্রামের মৌচাষি সানোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানান, তার ১৪০টি মৌবাক্স রয়েছে। সেখান থেকে সপ্তাহে ৮ মন মধু সংগৃহ করতে পারেন তিনি। মধু সংগ্রহের কাজে তিনি ছাড়াও আরো ২ জন শ্রমিক নিয়োজিত আছে। সপ্তাহে সংগ্রহৃত মধু বিক্রি করতে পারে ৪৮ হাজার টাকা। আর এর জন্য খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। সাপ্তাহ শেষে তার আয় থাকে প্রায় ৩২ হাজার টাকা।
একই ইউনিয়নের মোল্লা বাজার গ্রামের মৌচাষি বেলাল হোসেন জানান, তাদের উৎপাদিত মধু এপি, ডাবর, কম্বোসহ দেশের বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানীগুলো ৬-৭ হাজার টাকা মন দরে পাইকারী কিনে নেন। ডিসেম্বর মাসজুড়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগৃহীত হয়ে থাকে। তার জানা মতে এ উপজেলার অন্তত ৪০ জন মৌচাষি এ পেষার সাথে যুক্ত আছেন।
উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, স্বল্প সময়ে সরিষার ফসল ঘরে তুলে একই জমিতে বোরো ধান চাষ করা যায়। এর জন্যই সরিষা চাষ করে থাকি। এ বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। সরিষার গাছ যে সুন্দর দেখা যাচ্ছে তাতে সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
রুহাই গ্রামের কৃষক আতিকুর রহমান বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এ বছর চলনবিল অঞ্চলে বর্ষার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এলাকার স্থানীয় কৃষকেরা এবছর অধিক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। অল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তুলে ওই জমি বোরো আবাদ করা যায় বলেই আমরা সরিষা চাষ করছি।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ জানান, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। ভোজ্য তেল ও সরিষার বাজারদর বেশি হওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। একারনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে যার উৎপাদনও বাড়বে। অপরদিকে সরিষা ফুল কেন্দ্রিক মধু সংগ্রহে কৃষক ও মৌ-খামারীরা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন।
Leave a Reply