ডেস্ক রির্পোট
প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম হচ্ছে। চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন অচেনা এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে। এবার মৃতের তালিকায় যুক্ত হলো ভাষাসৈনিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানীর নাম।
শনিবার সকাল দশটার দিকে রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমদ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সকাল ১০টায় মারা গেছেন কামাল লোহানী। করোনায় আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও কামাল লোহানী ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা ছিল।
গত বুধবার কামাল লোহানীকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিনই তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়। শুক্রবার পরীক্ষার রিপোর্টে পজিটিভ আসে। পরে তাকে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক এই মহাপরিচালক দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। এর আগে গত ৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন কামাল লোহানী। এরপর করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে আর কোথাও চিকিৎসা করানো হয়নি। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ১৭ মে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা নিয়ে ২ জুন বাসায়ও ফিরে যান। আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কামাল লোহানীর কিডনি জনিত সমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিলো।
২০১৫ সালে একুশে পদক পান কামাল লোহানী। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। কামাল লোহানী বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক। কামাল লোহানী নামে পরিচিত হলেও তার পারিবারিক নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন চাক্ষুষ সাক্ষী।
কামাল লোহানী দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতায় কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ছায়ানটের সম্পাদক হিসেবে চার বছর করে দায়িত্ব পালন করেন। কামাল লোহানী উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা।
কামাল লোহানীর পরিবারের বসতি ছিল যমুনা পাড়ে। খাস কাউলিয়ায়। আগ্রাসী যমুনা-গর্ভে তাদের বাড়িঘর জমি-জিরেত চলে যাওয়ার পর তারা সিরাজগঞ্জেরই উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। আর এই সনতলা গ্রামেই ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন কামাল লোহানী জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী। মা রোকেয়া খান লোহানী।
কামাল লোহানীর মৃতূতে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যূতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিনসহ বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী এমপি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতারা।
জোনাকী টেলিভিশন/এসএইচআর/২০-০৬-২০ইং
Leave a Reply