নিজস্ব প্রতিবেদক
“ইশরাত ঝুনা” এই নামটি দেশের প্রায় প্রত্যেক বাগানী/গাছপ্রেমির কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের ফুল, ফল, শাক, সবজির সমন্বয়ে নিজ বাড়ীর ছাদে গড়ে তুলেন একটি সুদৃশ্য ছাদ বাগান। অনেকেই তার এই ছাদ বাগান দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে। তার এই ছাদবাগান থেকে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার সকল স্তরের মানুষ উপহার পেতেন অসংখ্য দেশী বিদেশী ও বিরল প্রজাতির ফুল, ফল, শাক, সব্জির চারা ও বীজ। এবং এভাবে উপহারগ্রহীতারাও গড়ে তুলেছেন নিজেদের ছাদ বাগান বা সবুজ বনায়ন। শুধু চারা, বীজ নয় বরং আগ্রাহীদের বাগান করতে পরামর্শসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এসেছেন বিনামূল্যে । তার এসকল কাজ করার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সবুজপ্রেম জাগ্রত করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর – সবুজ দেশ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা। যেনো সকলে পায় প্রান ভরে বিশুদ্ধ নিশ্বাস আর নিরাপদ খাদ্য। আর এভাবেই সম্পুর্ন নিজস্ব উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সশরীরে গিয়ে ইভেন্টের মাধ্যমে উপহার প্রদানের কাজটি নিরলসভাবে করার মাধ্যমে তিনি দেশের হাজারো গাছপ্রেমির কাছে হয়ে উঠেছেন প্রিয় ঝুনা আপা। কিন্তু সবার প্রিয় সেই ইশরাত ঝুনার উপহারের একমাত্র কারখানা বা প্রোডাকশন হাউজ খ্যাত তার ছাদ বাগানটির গাছগুলো উপড়ে ফেলে দিয়ে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দিয়েছে ফয়সাল হক রিমন নামে এক বেরসিক সবুজের শত্রু।
ফয়সাল হক রিমন ৩৪২, উত্তর শাহজাহানপুর এলাকার ফজলুল হক ছানু এর ছেলে। গত ৪ জুলাই সে ঝুনার এই স্বপ্নের ছাদ বাগানটি ধ্বংস করে তা গুড়িয়ে দেয়।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে সবুজ বনায়নে আহবান জানাচ্ছেন বারবার । তিনি সকলকে ৩টি করে গাছ লাগনোর আহবান জানান।প্রধানমন্ত্রীর সবুজ বনায়ন গড়ে তোলার আহবানে সাড়া দিয়ে ৭ বছর আগে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইশরাত সরকার ঝুনা উত্তর শাহজাহানপুরের ৫ তলা ওই বাড়ীর ছাদে গড়ে তুলে একটি সুদৃশ্য ছাদ বাগান। তার ছাদ বাগানে দেশ-বিদেশি বেশ কিছু মূল্যবান দুষ্পাপ্য ফুল, ফল ও সবজির গাছ ছিল যা দেখে অনেক গাছপ্রেমি চারা সংগ্রহে ছুটে আসতো। তিনিও যখন যে আসতো, নিজ বাগান থেকে তাদের চাহিদা মত বিনামূল্যে উপহার হিসেবে তার হাতে তুলে দিয়েছেন অসংখ্য গাছের চারা।নিজের পাশাপাশি ঝুনা সকলকে ছাদ বাগান গড়ে তোলার উৎসাহ জোগাতেন এবং বাগান তৈরিতে দিক-নিদের্শনাসহ সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করতে।ইতোমধ্যে ঝুনার পরিকল্পনা ও পরিচালনায় “সবুজ সেনা সোসাইটি / Green Garden Society” সহ ৫ টি ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন অনলাইনে ও মাঠে নিয়মিতভাবে সবুজায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।আর এসব গ্রুপের সদস্যদের কাছে অল্প কয়দিনে ঝুনা হয়ে উঠেন সবার প্রিয় ও তার ছাদ বাগানটি হয়ে উঠে সবার স্বপ্নের বাগান।মাস পাঁচেক আগে ঝুনা ও তার স্বামী শাহজাহানপুরের ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়ে শান্তিবাগের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠে।বৈশ্বিক করোনা মহামারির এই সময়েও তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আগ্রহী মানুষের কাছে নানান মাধ্যমে তার সবুজ উপহার সামগ্রী পাঠাতে থাকেন। গত ৪ জুলাই তিনি চট্রগ্রাম, নরসিংদী, নারায়গঞ্জ ও ঢাকার বেশকিছু সংখ্যক গাছপ্রেমিকে তাদের চাহিদামতো চারা, বীজ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।এবং সেই উদ্দেশ্যে যখনি তিনি তার ছাদবাগানে চারাগুলো সংগ্রহ করতে আসেন -দেখতে পান তার স্বপ্নের সেই ছাদবাগান গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাঁচতলার ছাদ থেকে বাগানের প্রায় ২০ শতাংশ গাছ নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে এবং বাকী গাছগুলো উপড়ে ফেলে দিয়ে পুরো বাগানকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করা হয়েছে। ঝুনা এ ব্যাপারে আশপাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করলে পাশের বিল্ডিংয়ের লোকজন রিমনের নাম উল্লেখ করে। পরে ঝুনা বাগান ধ্বংসের বিষয়ে ফোনে রিমনের কাছে জানতে চাইলে সে তা স্বীকার করে। সে বলে , ‘এখানে কোনো বাগান করা যাবেনা তাই ছাদ পরিস্কার করে ফেলছি।’ রিমনের কথায় ঝুনা হতভম্ব হয়ে পড়ে। সে কি করবে কিছুই ভেবে পায়না। হঠাৎ চিন্তা-চেতনায় ধ্বংসকৃত তার ছাদ বাগানের ভিডিও চিত্র ধারণের বিষয়টি আসলে সে মোবাইলে ধারণ করতে শুরু করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে।বাগান ধ্বংসের ভিডিও চিত্রটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সারাদেশের গাছপ্রেমিরা প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
ফেইসবুকে ঝুনার স্বপ্নের ছাদ বাগান ধ্বংসের ভিডিও চিত্র দেখে বাগান ধ্বংসকারী সবুজ ও বনায়নের শত্রু রিমনের দৃষ্টান্ত মূলক শান্তি দাবী করে মন্তব্য করতে থাকে সারা দেশের সবুজপ্রেমীরা।
এদিকে ঝুনা তার বাগান ধ্বংসের ঘটনায় রিমনের নাম উল্লেখ করে শাহজাহানপুর থানায় ৮ জুলাই একটি সাধারণ ডাইরি করেন। যার নং ৩৩৮ তারিখ ৮-৭-২০ইং।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ফয়সাল হক রিমনের মোবাইল ০১৬৭৬৭৫৭৮৩১ নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জোনাকী টেলিভিশন/এসএইচআর/১০ জুলাই ২০২০ইং
Leave a Reply