মনিরুজ্জামান,নরসিংদী
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও জামায়াত শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে সরেজমিনে এলাকায় গেলে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন এলাকার কাউকেই তোয়াক্কা করে না।তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও সার্বক্ষণিকভাবে জামায়াত শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষকে তিনি জামায়াত-বিএনপির আড্ডাখানায় রূপান্তর করে রেখেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কোনোরূপ মূল্যায়ন করেন না। বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে তিনি একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।এব্যাপারে এলাকার কারো পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না তিনি।
বর্তমানে সভাপতি হিসেবে যার নাম প্রস্তাব করেছেন তিনি হলেন, কাউছার ভূঁইয়া। তার সন্তানের বয়স এখনো দুই বছর পূর্ণ হয় নি। অথচ এ দুধের শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি দেখিয়ে তার পিতাকে সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন,বিদ্যালয় সংক্রান্ত যে কোন সিদ্ধান্ত প্রধান শিক্ষক একাই নিয়ে থাকেন। বিদ্যালয়ের কোন অনুষ্ঠানে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের দাওয়াত করেন না। বিগত কিছুদিন পূর্বে একটি জরুরী বিষয়ে আলোচনার কথা বলে সাদা কাগজে সভাপতির স্বাক্ষর করিয়ে নেন বলে ও জানান তিনি।
দক্ষিণ মির্জানগর ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহেল ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিদ্যালয়ের অফিসকে তিনি জামায়াতের অঘোষিত অফিসে রূপান্তরিত করে রেখেছে। সে দলীয় নেতাকর্মীদের কোনোরূপ মূল্যায়ন করে না। বিদ্যালয়ের কোন কাজেই তিনি এলাকার নেতৃস্থানীয় কাউকে ডাকে না। তিনি তার পছন্দ অনুযায়ী লোক নিয়ে কমিটি গঠন করেছে।
তার স্বেচ্চাচারীতা ও একক সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে এলাকার সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। এব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, সাখাওয়াত হোসেনের পিতা একজন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার পিতার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে সে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকুরী বাগিয়ে নেয়।
ছাত্রজীবন থেকেই সে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে সে জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছে। বর্তমানে তিনি তার বেতনের সিংহভাগ অর্থ জামায়াত-শিবিরের পেছনে খরচ করে থাকেন।
তার এসকল কর্মকাণ্ডের কারণে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।দক্ষিণ মির্জানগর আছমতুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও বালিকা বিদ্যালয়সহ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাথে যারা জড়িত যেমন-বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব ভূঁইয়া, নুরুজ্জামান ভূঁইয়া এধরনের লোকজনকে দক্ষিণ মির্জানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন খুব একটা ডাকেনা। তিনি নিজে নিজেই মাতাব্বরি করেন। তাছাড়া তিনি জামাত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ও পাত্তা দেয় না। বিগত কিছুদিন পূর্বে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য কাউকেই দাওয়াত বা চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়নি বলেও জানান তিনি।
একজন প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়াসহ শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হওয়ায় এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি হাসনাবাদ আছেন বলে জানান।
পরে তার সাথে দেখা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমার কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাই বিদ্যালয়ের ভালোমন্দ বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ততো আমাকেই নিতে হবে। আর বিদ্যালয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন বা তাদের পরামর্শ নিতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে মর্মে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান তিনি। জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি কখনোই জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে আমি তাবলীগ জামাতের সাথে বিভিন্ন সময়ে চিল্লায় গিয়েছি।
বর্তমানে প্রস্তাবিত সভাপতি কাউছার ভূঁইয়ার সন্তানের বয়স কত জানতে চাইলে তিনি বলেন চার বছরের উপরে। পরে তার জন্মনিবন্ধন সনদ দেখতে চাইলে তিনি বলেন টিকা কার্ড দিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে।কিন্তু টিকা কার্ড বা বয়স সংক্রান্ত কোন প্রকার প্রমানাদি তিনি দেখাতে বা প্রমাণ করতে পারেন নি তিনি।
রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ হোসেন বলেন,ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply