ডেস্ক রির্পোট
প্রভাবশালী দুই নেতার কোন্দলে আটকে বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সুপার ফাইভ ঘোষনার পর সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু নিজেদের পাল্লা ভারী করতে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। ফলে সুপার ফাইভ ঘোষনার তিন বছরের মাথায় আংশিক কমিটির নাম ঘোষনা করলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরও প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এদিকে কমিটি ঘোষনার আল্টিমেটাম দিয়েছে দলের পদপ্রত্যাশী শীর্ষ নেতারা অন্যথায় আন্দোলনে নামবে তারা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি তিন বছরের জন্য যুবদলের সুপার ফাইভ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু পাঁচজনের কমিটি তিন বছর পার করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি দেয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭১ সদস্যের কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে না নির্দিষ্ট করে এখনো বলতে পারছেন না যুবদলের দায়িত্বশীল কেউ।
যুবদলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বলয় ভারী করা নিয়ে সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া সম্ভব হয়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি না থাকা আর নেতাদের কোন্দল মাঠের কর্মসূচিতেও প্রভাব ফেলেছে। আর এই কারণেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুবদল কর্মীদের অংশগ্রহণ কমেছে। একই সঙ্গে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা নেমেছে। এই অবস্থার মধ্যে পদপ্রত্যাশী শীর্ষ নেতারা ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এসময়ের মধ্যে কমিটি না হলে তারা আন্দোলনে যাবেন।
তবে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের দাবি, ক্ষমতাশীনদের মামলা-হামলা, দমন নীতির মধ্যেও যুবদল সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কমিটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই বলেও দাবি করেন তিনি। দিনক্ষণ উল্লেখ করে রাজনীতি হয় না। বাস্তব অবস্থার কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারিনি। চেষ্টা অব্যাহত আছে। যেকোনো সময় দেয়া হবে।’
আল্টিমেটাম দেওয়া নেতাদের বিষয়ে তিনি বলেন, যুবদলে হাজার হাজার পদপ্রত্যাশী। এখানে কে কি বললো সেটা বড় বিষয় না। যারা মাঠে সক্রিয় ছিলো তাদের মূল্যায়ন করা হবে।’
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবি নিয়ে গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মাঠের আন্দোলন-কর্মসূচিতে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। অন্যথায় তারা আন্দোলনে নামবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এক সদস্য গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের পাল্লা ভারী করার চেষ্টা করছেন বলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না।’বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আংশিক কমিটিতে যারা পদ পেয়েছে তাদের বেশিরভাগই যুবদলের সবশেষ কমিটির। যেখানে সভাপতির লোকজন বেশি। আর সাবেক ছাত্রদল নেতাদের যারা পদ পেয়েছেন তারা সাধারণ সম্পাদকের বলয়ের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ সম্পাদকের লোকজনকে পদ দিতে হবে। এতেই সভাপতির অনীহা।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্স বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দের হলেও সভাপতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠছেন না সাধারণ সম্পাদক টুকু। তিনি বারবার চেষ্টা করছেন কিন্তু সভাপতি নীরব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পছন্দের হওয়ায় বেশিদূর এগুতে পারছেন না।
যদিও এমন অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে যুবদল সভাপতি বলেন, আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সবকিছু আলোচনা করেই করছি। যারা এসব বলে তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
এব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ টুকু সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সংগঠনে গতি আনতে আংশিক কমিটি দেয়ার পর ১১টি সাংগঠনিক টিম সারাদেশে মাঠে নামায় যুবদল। প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার ইউনিয়ন পর্যন্ত সব ইউনিটে তারা মতবিনিময় করা, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক চিত্র কেন্দ্রে জমা দেয়ার জন্যও বলা হয়েছিল।
সে অনুযায়ী কাজ শুরু হলেও সফর নিয়ে শুরুতেই সমালোচনা হয় সংগঠনের অভ্যন্তরে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে আংশিক দিয়েই এমন সফরের বিরোধিতাও করেন কেউ কেউ। এরপরও সফর শুরু হলে কোথাও কোথাও সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে কমিটি দেয়ার নামে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে।
পরে কয়েকজনকে টিমের তালিকা থেকে বাদও দেয়া হয়। কোথাও কোথাও দ্বন্দ্বের জেরে বাধার মুখেও পড়তে হয় নেতাদের। এমন বাধার কারণে গত ২১ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর কয়েকটি ইউনিটে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত থাকলেও করতে পারেনি যুবদলের নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা তো কেউ ধোয়া তুলসি পাতা তা নয়। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর অনেক সময় সেসব কমিটি স্থগিত করেছি। পরে সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এসময় তাকে দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কৌশলে এড়িয়ে যান এই নেতা।
এব্যাপারে যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু বলেন, প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা কাজ করেছি। সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার কারণ নেই। পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো হলেই কমিটি দেয়া হবে। চেষ্টার ত্রুটি নেই।
তথ্য সূত্র: ঢাকা টাইমস
Leave a Reply