মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী
করোনা মহামারিতে সবকিছুকে উপেক্ষা করে নরসিংদীতে ঈদ কেনাকাটায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। বিপণীবিতান বা ফুটপাত, কোথাও নেই সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই। সবখানেই উপেক্ষা করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ঈদ উপলক্ষে জেলার খুলে দেয়া মার্কেট-বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে রক্ষা করা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ সচেতনতামুলক প্রচার প্রচারণা চালালেও কেউ কর্ণপাত করছে না। বিভিন্ন মার্কেটে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি ।
হরদমে চলছে ঈদের বেচাকেনা। ক্রেতা বিক্রেতা কারোই সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ নেই। আজ সারাদিন নরসিংদী শহরের কয়েকটি কাপড়ের মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন মার্কেট দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড়।
যেখানে শিশুসহ বয়স্কদের বাজার ও জনসমাগমে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল; সেখানে ক্রেতারা শিশুসন্তান ও বয়স্কদের নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করছেন। এতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। পরিবার পরিজন নিয়ে যে যার মতো করে মার্কেটে আসছেন। দোকানে দোকানে ঘোরাঘুরি করে কাপড় দেখছেন ক্রয় করছেন। বিক্রেতাদের কেউ কেউ ক্রেতাদের হ্যান্ডওয়াশ দিলেও সামাজিক দূরত্ব কেউ রক্ষা করছেন না।
সচেতন মহলের লোকজন বলছেন, এমনিতেই ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেশি; তারপর মার্কেট দোকানে সামাজিক দূরত্ব না মানায় সামনে করোনা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এখনি যদি করোনা মোকাবিলায় নতুন করে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, লকডাউন কঠোরভাবে পালন করা না হয়; তাহলে ঘরে ঘরে বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সরেজমিনে নরসিংদী শহরের শহীদ ছাত্তার সড়ক, সিএনবি রোড়, স্টেশন রোডসহ নরসিংদী বড় বাজারের বিভিন্ন বিপণীবিতান, দোকানপাটে ঈদ কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভীড় পরিলক্ষিত হয়েছে। দেখলে মনে হয় এখানে যেন করোনার হাট বসেছে।তবে ঈদ কেনাকাটায় তুলনামুলক ভাবে মহিলাদের উপস্থিতি বেশী দেখা গেছে।
নরসিংদীতে দিন দিন আশংকাজনক হারে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে মাধবদীসহ নরসিংদী শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাগুলোতে বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি এলাকাকে রোড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারীভাবে ১০ মে থেকে দেশের সর্বত্র বিপণীবিতানসহ দোকানপাট খোলার অনুমতি দিলেও জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যাওয়ায় নরসিংদীতে অধিকাংশই বন্ধ থাকে। নরসিংদী বড় বাজারের দোকানপাট খুললেও ১২ মে থেকে বণিক সমিতি তা বন্ধের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে গত ১৫ মে থেকে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত খোলা বাজার বণিক সমিতি তা খোলার অনুমতি দিলে মানুষ যেন হুমরি খেয়ে পড়েছে। নরসিংদী বড় বাজারের কালিবাড়ী রোডস্থ বিভিন্ন থান কাপড়ও থ্রি-পিসের দোকান, জুতার দোকানগুলোতে তীল ধারণের কোন জায়গা নেই। কোন সামাজিক দুরত্ব মানা হচ্ছেনা এখানে।রাখা হয়নি কোন স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। দোকান খোলা রাখার অন্যান্য শর্তগুলো এখানে মুখ থুবড়ে পড়ে।ঈদ কেনাকাটা করতে আসা প্রতিটি মানুষের মাঝেই যেন অস্থিরতা কাজ করছে।
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে খোলা হয়েছে শহরের আধুনিক বিপণীবিতান ই্নডেক্সপ্লাজা। সেখানেও ব্যাপক ভীড় পরিলক্ষিত হয়েছে।বিপণীবিতানটি প্রধান ফটকের বাহিরে জীবানুনাশক ট্যানেল স্থাপন করা হলেও ভিতরে গিয়ে আর বজায় রাখছেনা সামাজিক দুরত্ব।
এদিকে ঈদ কেনাকাটা করতে আসা অধিকাংশ মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লবস ব্যবহার করছে না।ফলে মানুষের এই অসচেতানতাই ব্যাস্তে পারে করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের সকল আয়োজন। যে কোন সময় জেলার করোনা পরিস্থিতি বিষ্ফোরিত হয়ে পার্শ্ববর্তী নারায়গঞ্জের রূপ নিতে পারে এমনটা আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
এ সময় ঈদের কেনাকাটা করতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, পরিবারের চাহিদা মতো কিছু কাপড় কিনতে এসেছি। তবে মার্কেটে প্রচুর লোকের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তো করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে মনে হচ্ছে। রাজধানীর একাধিক মার্কেটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল দোকান মালিকরা করোনা সংক্রমণ রোধে নানা পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো দোকানেই ক্রেতা বিক্রেতা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য পরিবেশবাদী নেতা মো. মোস্তফা খান বলেন, আমরা আর কবে সচেতন হবো। আমাদের সামান্য অসচেতনতার কারনে দেশ ও দেশের মানুষ আজ চরম হুমকীর মুখে। আমরা সচেতন না হলে সরকারের পক্ষে আমাদেরকে সচেতন করা সম্ভব নয়। এখনও সময় আছে, আসুন আমরা সচেতন হই, নিজে বাচি, পরিবার এবং দেশকে বাচাই। এসময় তিনি করোনা রোধে এবং করোনাকালে ঘরবন্দি মানুষদের জন্য করনীয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগপযোগী সিদ্ধান্তগুলোকে সাধুবাদ জানান।
জেলার তরুণ সংগঠক আমরা নরসিংদীবাসীর সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহম্মেদ, করোনা পরিস্থিতির এই সময়ে নরসিংদী বাজার ও শপিংমলগুলোর চিত্র সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে। এ অবস্থায় বিপদের আশঙ্কা করছি। যে কোন সময় নরসিংদীতে মহামারি শুরু হয়ে যেতে পারে ।
জোনাকি টেলিভিশন/এসএইচআর/১৮-০৫-২০ইং
Leave a Reply