নরসিংদী প্রতিনিধি :
করোনাভাইরাসের সংক্রম রোধে সারাদেশ লকডাউনে। সারাদেশের মত নরসিংদীতে প্রায় ৭০০টি কিন্ডার গার্টেন(কেজি স্কুল) ও প্রায় ৩০০টি অনিবন্ধিত বেসরকারী স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় ১২ হাজারের অধিক শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ কর্মচারীরা। স্কুল বন্ধ থাকায় বেতন নেই। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। মানবেতর জীবনযাপন করা শিক্ষকরা রেশন কার্ড ও নগদ টাকা প্রনোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
জানা গেছে, জেলা কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন অন্তর্ভুক্তসহ প্রায় ৭০০টি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে কর্মরত রয়েছেন ৭ হাজারের বেশী শিক্ষক-কর্মচারী। আর এ শিক্ষকরা প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করিয়ে থাকেন।
অপরদিকে প্রায় ৩০০টি অনিবন্ধিত বেসরকারী স্কুল-কলেজে ৫ হাজারেরও বেশী শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এসকল প্রতিষ্ঠার শিক্ষকরা অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থীদেন পাঠদান করেন।এ সকল কিন্ডার গার্টেন ও স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের বেতন ও টিউশন ফি দিয়ে চলে। শিক্ষার্থীদের বেতনেই সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি আদেশে গত ১৮ মার্চ হতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ রয়েছে। জেলার এ প্রতিষ্ঠানগুলোও এর বাহিরে নয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা। স্কুল বন্ধ থাকায় কোনো বেতন নেই। টিউশন ফি বন্ধ থাকায় শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাসিক সম্মানীও বন্ধ। তাছাড়া ঘরে-বাহিরে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় অনেক শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ নেই। আবার অনেকেই অস্বচ্ছল। শিক্ষক পেশায় থাকায় সমাজে সম্মানীয় হওয়ার কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ গ্রহণ করতে পারছেন না। আবার না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতেও। এ অবস্থায় অনেক শিক্ষকই পরিবারকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। চার দেয়ালর মধ্যে গুমড়ে কেঁদে মরছে তাদের অন্তর আত্মা।
বেসরকারী শিক্ষকদের দাবী এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হতে হলে তাদের দিকে সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। সরকারী প্রণোদনায় শিক্ষকদের অন্ধকার দূর করতে পারে।
গ্রীনহীল ল্যাবরোটারী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কিন্ডার গার্ডেন স্কুলগুলোতে কিছুতা বাড়তি সহায়ক বই যুক্ত করে সরকারি বিধি মেনে সরকারি শিক্ষা কারিকুলাম মেনে ও সরকারি সকল জরিপে অংশ গ্রহণ করে পাঠদান করা হয়। পাঠদানের মান ও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ভালো অর্জন করায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কিন্ডার গার্ডেল স্কুলে ভর্তি করান। দেশের এ দূর্যোগ মূহুর্তে কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষকদের জন্য রেশন কার্ড ও নগদ অর্থ প্রনোদনা প্রদানের দাবি করছি।’
আল হেরা কিন্ডার গার্ডেনের অধ্যক্ষ এমএস সফিক বলেন, ‘করোনার এ পরিস্থিতিতে কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষকেরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়ে সেই টাকা যদি শুধুমাত্র পুঁজিপতিদের বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পিছনে ব্যয় করে, তাহলে মানুষ গড়ার কারিগর এসব শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ কি হবে? আর শিক্ষকরা যদি নিঃস্ব হয়ে যান, স্বল্প পুঁজির এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ-ই বা কি হবে?’ উইজডম প্রিপারেটরি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মোঃ শাহীনুর মিয়া বলেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষকদের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করে ছুটি দেই,আমাদের স্কুল গুলি সেমিস্টার পরীক্ষায় ৭০% বেতন উত্তোলন হয়, এখন পরীক্ষা ও স্কুল বন্ধ হওয়াতে ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফী আদায় সম্পূর্ণ বন্ধ। আজ শিক্ষকদের বেতন ধারদেনা করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। ইতোমধ্যে আমি শিক্ষকদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে আসি, আমার শিক্ষক যত কষ্টই করুক তারা ত্রাণের জন্য কোথায়ও হাত পাত্তে পারবে না,কারন তারা শিক্ষক। অর্থ না থাকলেও শিক্ষক পরিচিতির কারণে আমরা অন্যের নিকট সাহায্য চাইতে পারি না। এখন আমাদের অনেকের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। চলমান দুর্যোগে দেশ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আমাদের দেশে যত পেশার লোক আছে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা হলে অসচ্ছল পেশাজীবিদের মধ্যে বেসরকারী স্কুলগুলোতে কোমলমতি ছেলে-মেয়েদে শিক্ষাদানকারী শিক্ষকরা প্রথম। দারিদ্রের কষাঘাতে এই শিক্ষকরা আজ জর্জরিত। তাই সরকার এই সকল শিক্ষকও তাদের পরিবারগুলোকে বাচাঁতে সরকারি সহায়তাসহ রেশন কার্ড ও নগদ অর্থ প্রনোদনা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে কিন্ডার গার্ডেন স্কুলগুলো অনেকে ভালো করছে। এই বিপদে জেলা শিক্ষা পরিবার তাদের পাশে আছে। আপাতত স্কুলগুলোর এসব শিক্ষকদের মাঝে সরকারি ত্রাণ প্রদান করা উচিত।
Leave a Reply