নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীতে অস্ত্রসহ ভ্রাম্যমান আদালতের গ্রেফতারকৃত ৪৬ জন কিশোরের মধ্যে ২৯ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদেরকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকী প্রাপ্তবয়স্ক ১৭ জনের মধ্যে ১০ জনকে জড়িত বলে মনে না হওয়ায় তাঁদের ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বাকি সাতজন স্বীকারোক্তি দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন আদালত। শনিবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতেই এই আদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. রহিস আল রেজওয়ান।
শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন মেঘনা নদীতে থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ওই ৪৬ জন কিশোর-তরুণকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বড় একটি রামদা, তিনটি চাইনিজ কুড়াল, চারটি লোহার পাইপ, একটি চেইন স্টিক ও একটি লোহার বড় ব্লেড। তবে ঠিক কী উদ্দেশ্যে অস্ত্রগুলো ওই ট্রলারে রাখা হয়েছিল, তা ওই কিশোর-তরুণদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেননি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে শেখ হাসিনা সেতু ও এর আশপাশ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছিলেন। রাত সাড়ে ৭ টার দিকে সেতুসংলগ্ন মেঘনা নদীতে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে একদল কিশোর-তরুণকে সাউন্ডবক্সে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে নাচানাচি করতে দেখা যায়। বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরে এলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ওই ট্রলারকে তীরে ভীড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রলারটি তীরে ভীড়ার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি ও আনসার সদস্যরা একটি স্পিডবোট নিয়ে ট্রলারটিকে ধাওয়া করে আটক করেন। পরে তীরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং করোনা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহ হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহিস আল রেজওয়ান ট্রলারটিতে তল্লাশি চালাতে নির্দেশ দেন। পরে ওই ট্রলার থেকে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ সময় ট্রলারটিতে অবস্থানরত ৪৬ জন কিশোর-তরুণকে আটক করা হয়। পরে নরসিংদী শহর ফাঁড়ি ও করিমপুর নৌফাঁড়ির পুলিশকে ডাকা হয়। তারা এলে আটক কিশোর-তরুণদের নরসিংদী মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত জানান, আটক ৪৬ জনের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল ২৯ জন। তাদের অভিভাবকদের ডেকে মুচলেকা আদায় করে তাঁদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ১৭ জনের মধ্যে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ১০ জনকে জড়িত বলে মনে না হওয়ায় তাঁদের ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি সাতজন স্বীকারোক্তি দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আটক ৪৬ জনেরই বাড়ি সদর উপজেলার মহিষাশুড়া ইউনিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা কোন কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। হয়তো এই কিশোর-তরুণদের কোন অপরাধ করার পরিকল্পনা ছিল।
জানা যায়, ঈদের আগের দিন জুয়েল (২৮) নামের তাদেরই ওই কিশোরদের একজন আনন্দ ভ্রমণের জন্য নৌকা ঠিক করেন। হানিফ মিয়া (৪২) নামের এক মাঝিকে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে দুই দিনের জন্য তাঁর ট্রলারটি ভাড়া করা হয়। এ ছাড়া নরসিংদী শহরের ঝিলিক লাইটিং হাউস নামের একটি দোকান থেকে দুদিনের জন্য তিন জোড়া সাউন্ডবক্স ভাড়া করা হয়েছিল।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. রহিস আল রেজওয়ান জানান, তাদের বহনকারী ওই ট্রলার ও তিন জোড়া সাউন্ডবক্সও জব্দ করা হয়েছে।
Leave a Reply