নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীতে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত স্বামী এমনটাই জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নরসিংদী পুলিশ সুপার’র কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। হত্যাকান্ডের পর স্বামী ফখরুলকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া গ্রামের ফখরুল ইসলামের স্ত্রী রেশমি আক্তার (২৫) ও তার ১৫ মাসের শিশু সন্তান সালমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, রবিবার (১২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় রেশমি আক্তার ও শিশু সন্তান সালমানের হত্যার খবর পান তারা। পরে সেখানে উপস্থিত হয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশ।
সাহেব আলী পাঠান জানান, প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে নরসিংদী শহরের দত্তপাড়া এলাকার পারভেজ মিয়ার মেয়ে রেশমি আক্তারের সাথে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া উত্তর পাড়া মহল্লার সাইফুল্লার ছেলে ফখরুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মাদকাসক্ত স্বামীকে নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো স্ত্রী রেশমি আক্তারের।
বিয়ের পর চাকরি না থাকায় ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এমন অভিযোগে ছেলে ফখরুলকে রিহ্যাব সেন্টারে দেয় তার বাবা-মা। পরে স্ত্রীর আবদারে তাকে রিহ্যাব থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এদিকে পারিবারিক কলহের জেরে রবিবার দিনগত রাতে ফখরুল ও তার স্ত্রী রেশমী বেগমের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথাকাটির এক পর্যায়ে ফখরুল উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং স্ত্রী-সন্তান উভয়কে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে খবর পেয়ে রাত ৩টার দিকে পুলিশ এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় ফখরুলের স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
আটককৃত ফখরুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফখরুল পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রী-সন্তানদের করেছে বলে জানায়। সে জানান, গত রাতে পারিবারিক কলহের অংশ হিসেবে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে উত্তেজিত হয়ে পরলে ঘরে ব্যবহৃত ছুরি দিয়ে তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে এক পর্যায়ে একটি আঘাত গলায় লাগলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে অতি রক্তক্ষরণে শরীর নিথর হয়ে তার মৃত্য হয়। ওই সময় তাদের প্রায় দেড় বছর বয়সী শিশু পুত্র সালমান বাবা মায়ে হাতাহাতির এ দৃশ্য দেখে কান্নাকাটি শুরু করলে তার গলায়ও ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে বলে সে জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান জানান, আটককৃত ফখরুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করলেও এর পিছলে অন্যকোন কারণ লুকিয়ে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখব। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় নিহত রেশমি আক্তারের বাবা পারভেজ মিয়া বাদী হয়ে ফখরুলকে আসামী করে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে হত্যার ঘটনার পর নিহত রেশমি বেগমের পিতা পারভেজ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জোনাকী টেলিভিশনকে জানান, রাত আড়াইটার দিকে তার মেয়ে ও নাতীর মৃত্যর খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, দুইবছর আগে পারিবারিক ভাবে তার মেয়ে রেশমি আক্তারের বিয়ে দেয় ঘোড়াদিয়া এলাকার পারভেজের সাথে। বিয়ে আগে পারভেজের মাদকাসক্তের বিষয়টি জানতেন না তারা।
তিনি জানান, বিয়ের পর থেকে নানান কারণে তার মেয়ে সাথে খারাপ ব্যবহার ও মানুষিক ভাবে নির্যাতন চালাত স্বামী ও শশুর বাড়ীর লোকজন। একথা জানালে বাবা-মা কষ্ট পেতে পারে তাই এ বিষয়ে কোনদিন তাদের কোন কিছু জানায়নি তার মেয়ে রেশমি বেগম। লোক মারফত কোন কিছু শুনলে তা তার মেয়ে কাছে জানতে চাইলে সে তা অস্বীকার করতো।
Leave a Reply