মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু,নরসিংদী
করোনার এই মহামারিতে কার্যত সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নরসিংদীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দিনমজুরেরা। নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা না থাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ না পেয়ে অর্থসংকটে দিন কাটছে তাদের।কুলি দিনমজুর ও চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করা এই শ্রেণির মানুষেরা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চাইলেও কারো কাছে হাত পাততে পারছেন না। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ সময় পার করছে তারা।
নরসিংদী শহরের পশ্চিমকান্দা পাড়া এলাকায় কাজ করা দিনমজুর সালাম মিয়া বলেন, আমরা ১০ জনের একটি দল ছিলাম। সাধারণত চুক্তি ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে ইট,বালু টেনে দিতাম। এজন্য প্রতিদিন পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত পেতাম। করোনা পরিস্থিতির প্রথম দিকে টুকটাক কাজ পেলেও গত দেড় মাস ধরে মানুষ বাড়ী-ঘরের কাজ করতে পারছে, তাই আমরা কাজ পাচ্ছিনা। এই অবস্থায় চাইলেও গ্রামে যেতে পারছি না এবং পরিবারকেও টাকা পাঠাতে পারছি না। আমাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা না থাকায় কেউ কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছে না।
শহরের বানিয়াছল এলাকার মোক্তার হোসেন বলেন, তিনি রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসাবে কাজ করতে। নির্দিষ্ট ঠিকাদারের অধিনে কাজ করতেন বিদায় প্রতিদিন কাজ ছিল তার। দিন প্রতি ৪ শ’ টাকা করে পেলেও মাসের প্রায় অর্ধেক সময়ই অতিরিক্ত কাজ করতে হত। সব মিলিয়ে দিনে ৫ থেকে ৬ টাকা পেতেন। অনেকদিন ধরে কাজ না থাকায় খুব কষ্টে তার সংসার চলছে।
নরসিংদী শহরের একটি খাবার হোটেলে কাজ করা ভজন দাস বলেন, মজুরি কম হলেও হোটেলের কাজ করা মোটামুটি আরামদায়ক ছিল। খাবারেরও কোন অভাব ছিল না। কাজের সময় বকশিসও পাওয়া যেত। মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা এমনিতেই চলে আসতো। এই টাকা দিয়ে খুব সুন্দর করে সংসার চলে যেত। দীর্ঘদিন হোটেল বন্ধ থাকায় আমাদের কোন কাজ নেই। এখন আমরা চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই অবস্থা কতদিন চলবে তা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। এছাড়া এ পরিস্থিতিতে অন্যকোন কাজ খোঁজার উপায়ও নেই।
নরসিংদী শহরে যারা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা এখন অর্থসংকটে দিন কাটাচ্ছে। তাদের অধিকাংশই রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হতে পাচ্ছেনা। আর যারা বের হচ্ছে তারা যে রিকশা দিয়ে একসময় যাত্রী নিয়ে ঘুরেছেন সেই রিকশা নিয়েই এখন ত্রাণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। রিকশাচালক কাউছার বলেন, রাস্তায় বের হলে আগের মত আর পাওয়া যায়না। অধিকাংশ পেসেঞ্জারই ভয় পায়। একটি রিকশায় বিভিন্ন ধরনের মানুষ উঠে যার ফলে রিকশাটি ভাইরাস মুক্ত কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় যাত্রীরা। এছাড়া পুলিশি হয়রানি তো আছেই।এজন্য বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ রিকশা উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে যেতেই নিরাপদ মনে করছেন।সারাদিনে যেখানে ৭/৮ শ’ টাকা কামাই হতো এখন সেখানে ৩/৪ শ’ টাকা কামাই হয় তার মধ্যে ২/৩ শ’ টাকা চলে যায় পুলিশি হয়রানিতে রিকশার যে ক্ষতি হয় তা মেরামত করতেই।
Leave a Reply