নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অব্যাহত কর্মবিরতির কারণে টিকা না পেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা। একই সাথে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিশোরী ও গর্ভবতী মায়েরাও।
স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতিতে জেলার ৭১টি ইউনিয়নের অস্থায়ী টিকা কেন্দ্র গুলোতে গিয়ে টিকা না পেয়ে শিশুদের নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অভিভাবকদের। কবে নাগাদ টিকা দেওয়া শুরু হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানা যায়, জেলার ৬টি উপজেলায় ১ হাজার ৭০৪টি টিকা কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু আট দিন ধরে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতিতে সব কেন্দ্রেই টিকাদান কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ হেলথ এ্যাসিস্ট্যান্ট এ্যাসোসিয়েশন’র ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য পরির্দশক, সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের “নিয়োগবিধি সংশোধনসহ ক্রমানুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন গ্রেড যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩তম গ্রেডে উন্নীতকরণ” করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয় এ কর্মবিরতি। তাদের বক্তব্য দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলমান থাকবে।
কর্মবিরতি চলাকালে তারা সব টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ করে সকাল ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মনি পতাকা নিয়ে স্ব-স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে অবস্থান করে কর্মবিরতি পালন করছেন।
সচেতন মহল মনে করেন, করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ যদি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটা হবে মড়ার উপর খাড়ার ঘা। কারণ তাদের সেবাগুলো একদম সাধারণ মানুষের দৌরগোড়ায় পৌছে যায়। যার মধ্যে অন্যতম রয়েছে গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুদের ১০টি মারাত্মক সংক্রামিত রোগের টিকা এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের কিশোরী ও মহিলাদের ৫ ডোজ টিটি টিকা-প্রদান।
এছাড়াও পোলিও, গুটিবসন্ত এর মতো ভয়াবহ মহামারী রোগগুলো বাংলাদেশ থেকে যে মূলে বিলুপ্ত হয়েছে তার পিছনে রয়েছে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারীদের অপরিসীম অবদান। তাই তাদের কর্মবিরতি যদি দীর্ঘ হয় তাহলে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের কর্মবিরতি ৮ম দিন অতিবাহিত করে।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কয়েকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ও কিশোরীরা টিকা নিতে গেলেও স্বাস্থ্য সহকারীদের অব্যাহত কর্মবিরতির কারণে টিকা নিতে পারছে না।
সদর উপজেলার টাওয়াদী এলাকার ৪২ দিনের শিশুকে টিকা দিতে এসেছিলেন মা কহিনুর বেগম। তিনি বলেন, ‘শিশুসন্তান
সাফায়েতকে টিকা দিতে এসে দেখি টিকাকেন্দ্র বন্ধ। এখন ফিরে যেতে হচ্ছে।
চিনিশপুর থেকে আসা আরেক শিশুর অভিভাবক হাসান বলেন, ‘আমার ১৫ মাসের বাচ্চাকে এমআর দ্বিতীয় ডোজ দিতে এসেছি। কিন্তু টিকাকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
একই এলাকার তাকমিনা আক্তার বলেন, ‘আমি কিশোরী টিকা নিতে এসেছি। কিন্তু টিকাকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বাসায় ফিরে যাচ্ছি।
কর্মবিরতি পালনকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, আমাদের এই তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীরা দেশে থেকে গুটি বসন্ত নির্মূল, ম্যালিরিয়া রোগ, ধনুর্ষ্টংকার, অন্ধত্ব দূরিকরণসহ সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি রোগ নিয়ন্ত্রিত করে। আমরা শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু হ্রাস, পোলিও নিমূর্ল তথা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বব্যাপি সুনাম অর্জন করেছি। আমাদের কাজের অর্জনেই আজ বাংলাদেশ টিকাদানে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণ থেকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী পেয়েছেন ৭টি পুরষ্কার। তারপরও সরকারের সকল কর্মচারি থেকে আমরা নানান বৈষম্যের স্বীকার।
তারা আরও জানান, ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বেতন বৈষম্য নিরসনের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালে ২ জানুয়ারি তৎকালিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এবং চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা হাম-রুবেলা ক্যাম্পইন বর্জন করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক মহোদয় আমাদের দাবি সমূহ মেনে নিয়ে লিখিত সমঝোতা পত্রে স্বার করেন। কিন্তু অদ্যাবধি বাস্তবায়নের কোন অগ্রগতি না থাকায় আমরা কর্মবিরতি পালন করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা এসব পূর্বঘোষিত প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত আমরা কাজে ফিরে যাবো না।
Leave a Reply