শাহাদৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী প্রতিনিধি :
নরসিংদীতে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে গভীর উদ্বেগের মধ্যে ছিল জেলাবাসী। কিন্তু জেলার সিভিল সার্জন অফিসের ফেইস আইডিতে গত দুইদিনের (২১ ও ২২ এপ্রিল) প্রকাশিত রির্পোট অনেকটাই স্বস্তিবোধ করছে জেলাবাসী।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বিগত ২০ ও ২১ এপ্রিল পাঠানো নমুনা পরীক্ষা করে জেলায় নতুন করে মাত্র ১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ১ জনসহ নরসিংদী জেলায় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৬৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
এদিকে আইইডিসিআর এর তথ্য মতে, নরসিংদী থেকে সরাসরি ভর্তি হওয়া এক করোনা রোগী গত ১৮ এপ্রিল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার মারা যায়। এছাড়া অপর এক রোগী সরাসরি আইইডিসিআরে নমুনা পরীক্ষা করালে তার করোনা পজেটিভ আসে। এই দুইজনসহ নরসিংদীতে করোনা রোগীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৬৮ জন।
জানা যায়, নরসিংদী জেলায় এ পর্যন্ত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, প্রকল্প কর্মকর্তা, সাংবাদিক, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিশুসহ ১৬৮ জন নোবেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার (২০ ও ২১ এপ্রিল) দুইদিনে সংগ্রহকৃত ৯৪ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হলে তাদের মধ্য থেকে মাত্র ১ জনের নমুনা পজেটিভ আসে। নতুন করে সনাক্ত হওয়া ব্যক্তি পলাশ উপজেলার বাসিন্দা বলে জানানো হয়।
এদিকে পলাশ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি করোনায় আক্রান্তিত জেলার প্রথম রোগি ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের মুফতি শামীম মিয়া। গত ১৭ এপ্রিল তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে যান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদী জেলায় এ পর্যন্ত ৬৮৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়। যার মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ১৬৬ জনের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে (করোনা হাসপাতাল) স্থাপিত আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া নতুন আক্রান্তদের পরিবারের সদস্য ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে এবং তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অপরদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অংশ হিসেবে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলাব্যাপী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিবিড় মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নির্বাহী আদেশ পালন ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও নরসিংদী জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর সার্বিক নির্দেশনায় পরিচালিত এসব কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী ও নরসিংদী জেলা পুলিশ। এছাড়া করোনা রোগী সনাক্তে নরসিংদীতে ইসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন ও দক্ষ জনবল পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য সচিবের নিকট আবেদন জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।
রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে এ আবেদন জানানো হয়। শিল্পমন্ত্রী এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও জানা গেছে। এ ল্যাব স্থাপিত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নরসিংদীতেই করোনা পরীক্ষা ও রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সোমবার নরসিংদী জেলার পলাশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গত ৯ এপ্রিল নরসিংদী জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করে নরসিংদী জেলা প্রশাসন। গত ১৩ এপ্রিল নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র ঘোষণা করে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। গত ১৮ এপ্রিল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার সর্বপ্রথম নরসিংদীর একজনের মৃত্যু হয়।
Leave a Reply