1. mostafa0192@gmail.com : admin2024 :
  2. arswaponbd6@gmail.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

নরসিংদীর মেহমানখানা এখন অনাহারী নারী পুরুষ ও শিশুদের ভরসাস্থল

মোঃ শাহাদাৎ হোসেন রাজু
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১
  • ২৭৪ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তত একবেলার আহার মেলে, সেটাই কম কিসের। মুরগির গোস্ত আর সবজি দিয়ে রান্না করা সুস্বাদু খিচুরি চেয়ার-টেবিলে বসে আরামে পেট পুরে খাওয়া যায়। আর এ জন‍্যই বর্তমানে নরসিংদীর মেহমানখানা সমাজের অসহায় দরিদ্র শ্রেণির নারী পুরুষ ও শিশুসহ সকল বয়সী অনাহারী মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে শেষ ভরসারস্থল।

দেখতে দেখতে  নরসিংদীর মেহমানখানার বুধবার (১৮ আগস্ট } ১৬ তম দিন অতিবাহিত করলো। ১৬ তম দিন বুধবার দুপুর ১টায় যথারীতি অসায় দরিদ্র শ্রেণির অনাহারী মানুষের খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়  মেহমানখানায়। এইদিন মেহমানখানায় সববয়সী নারী,পুরুষ ও শিশুদেরকে আত্মতৃপ্তিতে দুপুরের খাবার খেতে দেখা যায়। প্রায় চার শতাধিক অসহায় দরিদ্র মানুষ এইদিন মেহমানখানায় আপ‍্যায়িত হন।

বেলা তখন ২টা বেজে মেহমানখানায় তখন দুপুরের খাবার খেতে আসা অনাহারী মানুষের ভীড়। টেবিলের সামনের চেয়ারগুলো পরিপূর্ণ। তাই চেয়ার খালি না পেয়ে অনেক অনাহারী মানুষকে পাশের মার্কেটের সামনে মেঝেতে বসে খাবার খেতে দেখা যায়।  এসময় মেজবান রেষ্টুরেন্টের সামনে এর ভিতরে ঢুকার সিঁড়িতে চায়ের চামচ কেটে ছোট শিশু ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ১১/১২ বছর বয়সী কিশোরী বোন। নরসিংদীর মেহমানখানায় আসা দুই শিশু ( ভাই-বোন)’র এমন দৃশ‍্য দেখে লোভ সংবরণ করতে না পেরে এগিয়ে যায় এই প্রতিবেদক। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বোন লিজা আক্তার (১২)’র হাত ধরে দুপুরের খাবার খেতে মেহমানখানায় এসেছে ছোট ভাই শিশু ফয়সাল (৫)। ছোট ভাই নিজের হাতে খেতে পারবে না তাই বাসা থেকে নিয়ে চায়ের চামচ কেটে খাইয়ে দিচ্ছেন লিজা।  প্রায় প্রতিদিনই  দুপুরে ভাইকে সাথে নিয়ে মেহমানখানা আসে লিজা। নোয়াখালীর সেনবাগে তাদের গ্রামের বাড়ী। মা-বাবার সাথে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। বাবা ভেলানগর বাসস্ট‍্যান্ড এলাকায় ফুটপাতে হালিম বিক্রি করে। তারা ছাড়াও তাদের বড় আরেক ভাই আছে। ফরহাদ নামের ১৪ বছর বয়সী তাদের সেই বড় ভাই ওয়ার্কসপে কাজ করে। লকডাউনের সময় বাবার হালিম বিক্রির কাজ বন্ধ ছিল। ভাইয়েরও ওয়ার্কসপ বন্ধ ছিল। সংসারে কারো কোন রোজগার না থাকায় অনেক কষ্টে সেসময় দিন কাটাতে হয়েছে তাদেরকে।

লিজা জানায়, ‘লকডাউনকালী সময়ে লোক মুখে বিনা পয়সায় খাওয়ার কথা জানতে পেরে একদিন দুপুরে ছোট শিশুকে সাথে নিয়ে মেহমানখানায় আসে সে।মেহমানখানার সুস্বাদু  খিচুরি  পেট পুরে খেতে পেয়ে খুব তৃপ্তি পায়। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিন দুপুরে খেতে চলে আসে এই মেহমানখানায়।’

দুপুর ১টা বাজার সাথে সাথে মেহমানখানার মেহমানদের আপ্যায়ন শুরু হয়। চলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। চেয়ার টেবিলে বসে আয়েশ করে খানাপিনা শেষ করে হাসিসুখে ফিরে যান সুবিদাবঞ্চিত এই মানুষগুলো।

প্রতিদিন খাবার খেতে আসেন বাগেরহাটের হেলেনা বেগম। তিনি জানান, এখানের খাউন দাউন খুবঅই সুন্দর। মেঘ বিষ্টিতেও আঙ্গর কোনো অসুবিধা অয়না। উপরে ত্রিপলের পর আবার রংবেরঙের কাপড় দিয়ে ছামিয়ানা টানানো। চেয়ার টেবিলে বইয়া খুব আরাম কইরা মজার খাওন খাইয়া আঙ্গর অনেক শান্তি লাগে।

মেহমানখানার আয়োজকদের একজন নরসিংদী মডেল কলেজের শিক্ষক মহসীন শিকদার। তিনি জোনাকী টেলিভিশনকে জানান, দিন যতই গড়াচ্ছে মেহমানখানা অনাহারী মেহমানের সংখ‍্যাও বৃদ্ধি হচ্ছে। এতে তারা উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং খুশি। তিনি খোদা তালার কাছে এর জন‍্য শুকরিয়া জানান।

উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট প্রথম দিন তিন শতাধিক অনাহারী পেটপুরে খাওয়ার মধ্য দিয়ে এই মেহমানখানার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেদিন এই মহতি কাজের উদ্ভোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেহদী মোর্শেদ। এর পর থেকে এই মেহমান খানা পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

মেহমানখানার প্রধান উদ্যেগতা নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাজহারুল পারভেজ মন্টি জানান, হঠাৎ করেই মেহমানখানার এই পরিকল্পনা মাথা আসে আর পরদিন থেকে ঘনিষ্ট কয়েকজনকে সাথে আয়োজন করেন এই মেহমানখানার। বর্তমানে মেহমানখানায় আসা অনাহারী মানুষগুলোর সাথে তিনি আষ্টেপিষ্টে বাধা পড়ে আছেন। এক ভালবাসার বন্ধনে তিনি আবদ্ধ হয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘এ প্রেম কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়। এ প্রেম হচ্ছে পৃথিবীর মধুরতম সম্পর্ক। যেখানে নেই কোন চাওয়া-পাওয়া , নেই কোন স্বার্থ, আছে শুধুই ভালোবাসা। এই ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।’

মেহমানখানায় ১৬ তম দিনে উপস্থিত থেকে এই মহতি আয়োজন পরিদর্শন করেন নরসিংদী  রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান  সোহেল, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শাহাদাৎ হোসেন রাজু, সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান, অর্থবিষয়ক সম্পাদক তৌকির আহমেদসহ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Jonaki Media and Communication Limited
Design By Khan IT Host