মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু
নরসিংদীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) এর ১১টি শিল্প কারখানা ও রুগ্ন অবস্থায় থাকায় প্রতি মাসে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। যদি সবগুলো শিল্প ইউনিট চালু করা যেত, তাহলে সেখান থেকে সরকার অনেক রাজস্ব পেত। শিল্প মালিকদের সহযেগিতার অভাব, ব্যাংকঋণ খেলাপী ও বিবিধ সমস্যার কারণে কয়েক ইউনিট রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে আছে। বিসিক কর্তৃপক্ষ সুরাহা করতে চাইলেও মালিকদের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হয়না। ফলে সরকার মাসে মাসে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার ।
নরসিংদী বিসিক কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান আজকের এই বিসিক। শিল্প সমৃদ্ধ জাতি গঠনে এবং বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াবার জন্য শিল্প স্বনির্ভর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালে নরসিংদীর শিবপুরে গড়ে উঠে ১৫.৩৯ একর জমির উপর ভিত্তি করে বিসিকের এই শিল্পনগরী।
শিল্প নগরীগুলো ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের মাঝে প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ব্যবসা সফল করতে সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে ৭৬টি শিল্প নগরী দেশের অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রাখছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে রপ্তানীমুখি হচ্ছে প্রায় শিল্পনগরীতে অবস্থিত শিল্প ইউনিটগুলো। দেশের অনেক নামি প্রতিষ্ঠান এই বিসিকের সৃষ্টি যাদের মধ্যে স্কয়ার গ্রুপ, বেক্সিমকো, ন্যাশনাল ফ্যান অন্যতম। উদ্যোক্তা সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন ও ক্রমর্ধ্বমান বৈশ্বিক চাহিদায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে বিসিক তথা দেশের শিল্প নগরীগুলো।
নরসিংদী শিল্পনগরীতে ৯৫টি প্লট রয়েছে। যার মধ্যে ৫১টি শিল্প ইউনিট অবস্থিত। বর্তমানে চালু রয়েছে ৪০টি শিল্প কারখানা। বাকীগুলোর মধ্যে পূন:নির্মাণাধীন ১টি, রুগ্ন ৪টি এবং বন্ধ রয়েছে ৬টি শিল্প ইউনিট। এই শিল্প নগরীতে টেক্সটাইল পন্য, পাটজাত পণ্য, যন্ত্রাংশ, লুপ্লিকেন্ট, বায়োমিল, গ্রে-কাপড়, ভেটেনারী মেডিসিনসহ প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য পণ্য সুনামের সাথে উৎপাদন করে আসছে। নরসিংদী শিল্পনগরীর ৩৯ টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হচ্ছে।
বর্তমানে মহামারি সৃষ্ট ক্লান্তিকাল মোকাবিলায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের শিল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়তে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে শিল্প ইউনিট এবং সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ। তবে গতি আরও বেগবান করা যেতো যদি না সবগুলো শিল্প ইউনিট চালু করা যেত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিল্প মালিকদের সহযেগিতার অভাব, ব্যাংক ঋণ খেলাপী ও বিবিধ সমস্যার কারণে কিছু ইউনিট রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষ সুরাহা করতে চাইলে ও মালিকদের অসহযোগিতার কারণে প্রায়ই অনেক কিছু সম্ভব পর না হওয়ায় সরকার তার লক্ষিত আয় করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়াও শিল্পনগরীর শিল্প মালিকরা অনেটা খামখেয়ালি বশত: লাখ লাখ টাকা বকেয়া রেখেছে। যা আদায়ে বর্তমান শিল্প কর্মকর্তা তৎপর রয়েছে।
নরসিংদী শিল্পনগরীর রকর্মকর্তা মো: মনির হোসেন জানায়, প্রায় সবকটি শিল্প ইউনিটে স্বাস্থ্য বিধি মেনে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। শিল্পনগরীর কর্মকর্তা সকল কাজ তদারকি, উদ্ভুত যে কোন সমস্যা সমাধানে সব সময় প্রস্তুত থাকেন। তবে প্রায়শ: কিছু অনাকাঙ্খিত সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় তাকে। তিনি বলেন, নরসিংদী শিল্প কারখার শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে পরিপূর্ণ বেস্টনী তৈরী করা অত্যাবশকীয়। কিন্তু বেস্টনী তৈরীতে স্থানীয়দের দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হওয়ায় অনেকটা নিরাপত্তা হীনতায় আছে নরসিংদী শিল্পনগরী। এব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে অতিশীঘ্রই এর সুরাহা পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
তিনি জানান, শিল্প নগরীর দুটি রাস্তা ব্যতীত বর্তমানে সবকটি রাস্তাই ঢালাই করা। বাকী দুটি ২০২০-২১ অর্থবছরেই পরিপূর্ণতা লাভ করবে। ড্রেন ও পানির লাইন নিয়মিত পরিস্কার এবং মেরামত করা হয়। যাতে করে প্রবল বর্ষন জনিত , প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট অন্যান্য কারণে স্থবির অবস্থা সৃষ্টি না হয়। তার কার্যালয় (শিল্প নগরী কার্যালয়) সর্বক্ষণ এই সকল যাবতীয় সাধারণ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, শিল্প কারখানা হতে বিসিকের প্রাপ্ত লাখ লাখ রাজস্ব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শিল্প মালিকদের উদাসীনতায় বকেয়া রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘ আমি নরসিংদীতে যোগ দেয়ার পর বকেয়া পরিশোধে শিল্প মালিকদের অফিসিয়ালী চিঠি দিয়েছি। এপর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। বাকী বকেয়া পাওনা আদায়ে সচেষ্ট রয়েছি।’
তিনি আরও জানান, নরসিংদীতে শিল্প উদ্যোগতাদের চাহিদা থাকায় জেলার শিবপুর উপজেলার সৈয়দনগর এলাকায় আরেক শিল্প নগরী অর্থাৎ বিসিক-২ গড়ে তোলা হচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে নরসিংদীর শিল্পনগরী সহ দেশের বাকী ৭৫টি শিল্পনগরী অনুস্বীকার্য অবদান রেখে যাচ্ছে।
Leave a Reply