নিজস্ব প্রতিবেদক
পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে এখনও প্রায় মাস খানেক বাকি। এরইমধ্যে নিত্যপণের বাজার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মুনাফাখোরদের দৌরাত্ম্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজ, চাল ও মুরগির দাম বেড়েছে। রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ক্রেতাদের মতে, বাজার খরচ বাড়লে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় তো বাড়ছে না।
সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, মুরগি, লেবু ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে দাম কমেছে ডিম, আলু ও সবজির। অপরদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে ভোজ্যতেল, গরু, খাসির মাংসসহ অন্য পণ্যের দাম।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে আজ শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
নতুন করে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা চালের দাম আবারও বেড়েছে। ভোজ্য তেল ও মুরগির দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই। অধিকাংশ পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই চড়া। এ কারণে ক্রেতা বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষরা পড়েছেন বিপাকে।
সোহবানবাগ এলাকার বাসিন্দা জয়নুল আবেদীন বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে অচিরেই রাজধানী ছেড়ে যেতে হবে। এত দাম দিয়ে পণ্য কিনে ব্যয় নির্বাহ করে পরিবারসহ ঢাকাতে থাকা তার জন্য কঠিন।
খিলগাও বাজারে বাজার করতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাঁচার জন্য দরকারি পণ্য বিশেষ করে চাল, তেল, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম নাগালের বাইরে। এখন পেঁয়াজের দাম ৫৫-৬০ টাকা কেজি। বাজার খরচ শুধু বাড়ছেই। অথচ আয় বাড়ছে না।’
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারের তথ্য বলছে, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা দোকান থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে ৪০-৫০ টাকায়। বাছাই করা পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের শুরুর দিকে বাজারে আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ শেষের দিকে। এ কারণেই দাম বেড়েছে। আরও কিছুদিন এই পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে।
কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা দোকানে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যই বলছে, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ। নতুন করে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা। খুচরা দোকানে নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা এবং মাঝারি বিআর-২৮ চাল ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি’র তথ্যই বলছে, গত এক সপ্তাহে স্বর্ণা, চায়না অর্থাৎ মোটা চালের দাম বেড়েছে ১.৫ শতাংশ। এই এক সপ্তাহে পাইজাম ও লতা অর্থাৎ মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১.৮৫ শতাংশ এবং নাজিরশাইল ও মিনিকেট তথা চিকন চালের দাম বেড়েছে ০. ৮০ শতাংশ।
এছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা মুরগির দাম কমছে না। শুক্রবার (১২ মার্চ) খুচরা বাজারে সোনালিকা জাতের মুরগি প্রতি কেজি ৩১০-৩২০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৫৫ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪২০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মুরগির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। শীত চলে যাওয়ার সময়ে বিভিন্ন রোগের কারণে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষেরা মুরগি খাওয়া ছেড়ে দিতে শুরু করেছে। গরুর মাংসের কেজি ৫৫০-৫৭০ টাকা।
বাজারে মৌসুমের নতুন সবজি হিসেবে উঠতে শুরু করেছে সজনে ডাটা। তবে এ সবজিটির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এক কেজি সজনে ডাটা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। অবশ্য পটল ও ঢেঁড়সের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। এছাড়া আলু, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, গাজর, বেগুনসহ বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহে ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটল ও ঢেঁড়সের দাম কিছুটা কমে এখন ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। শশার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। মূলা ১৫-২৫ টাকা, বেগুন ২০-৩০ টাকা, পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা এবং গাজর ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০-৬০ টাকা।
Leave a Reply