ডেস্ক রিপোর্ট:
দেশে এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ। অপেক্ষাকৃত পরিবেশবান্ধব আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে নির্মিত দেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ নির্ধারিত সময়ের আগে এবং প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম খরচে সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি বড় প্রকল্প সম্পন্ন হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩২০টি পায়রা উড়িয়ে আজ এ বড় অর্জনের উদ্বোধন করবেন। করোনাকালে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি প্রথমবারের মতো সশরীরে উপস্থিত হবেন। এছাড়া আজ দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণাও দেবেন তিনি। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এমন মাইলফলক অর্জন করলো।
এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন ঘিরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এখন উৎসবমুখর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকমীর্র ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যস্ত সময় কাটছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরো যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্টদূত লি জিমিং ও বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান।
দুই ইউনিটের পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিটের উত্পাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট এন্ড এক্সপোর্টের (সিএমসি) সমান মালিকানায় কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। যৌথ মালিকানার কোম্পানির নাম বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে এটি নির্মিত হয়েছে। নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছে কনসোর্টিয়াম অব এনইপিসি এন্ড সিইসিসি।
কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রকল্পশেষে ব্যয় হয়েছে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। দেশের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম যা প্রাক্কলিত ব্যয়সীমার চেয়ে কমে কাজ শেষ করলো। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চে এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দরপত্র আহবান করা হয় ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। পরের বছর ২০১৬ সালের ২৯ মার্চে ঠিকাদারের সঙ্গে নির্মাণ (ইপিসি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী ৪৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। নির্মাণশেষে ২০২০ সালের ফেব্র‚য়ারিতেই কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। এরপর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে এবং দ্বিতীয় ইউনিটে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০২০ সালের ১৫ মে এবং একই বছরের ৮ ডিসেম্বর। বর্তমানে একই কমপ্লেক্সে আরেকটি পৃথক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সেই কেন্দ্রটির ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে ২১ শতাংশ এগিয়েছে।
গতকাল রবিবার পায়রা সফরকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কম সময়ে এবং প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম খরচ করে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। গত ৫০ বছরে দেশে এত কম সময়ে এমন বড় অবকাঠামো নির্মাণ করার উদাহরণ নেই। এটি আমাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রমাণ।’
এনডব্লিউপিজিসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিসিপিসিএলের ব্যবস্হাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজিতে নির্মিত হওয়ায় কেন্দ্রটির কারণে পরিবেশের ক্ষতি হবে নূ্যনতম। এটি আমাদের দক্ষতা ও সক্ষমতার অন্যতম গৌরব-স্মারক।’
এনডব্লিউপিজিসিএল সূত্র জানায়, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ হিসেবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় নাম লেখালো। এশিয়ায় চীন, তাইওয়ান, জাপান ও মালয়েশিয়াতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এই প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চীন ও বাংলাদেশ শুধু ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহার করে। ফলে পরিবেশগত ঝুঁকি আরও কমানো সম্ভব হচ্ছে। কেন্দ্রটিতে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরোদমে কেন্দ্রটি চালু হলে দিনে ১৩ হাজার টন কয়লার দরকার হবে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে অর্ধেক ক্ষমতায় চলছে কেন্দ্রটি। গত শনিবার ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন করেছে কেন্দ্রটি। সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় এটি পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালু করতে পারছে না। চলতি বছরের মধ্যেই তা সম্ভব হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
Leave a Reply