নিজস্ব প্রতিবেদক
মাধবদীতে পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণাসহ ব্যাপক তৎপরতা শুরু করছেন। মাঠ গোছাতে ভোটারদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরছেন। সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য প্রার্থীরা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারদলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বতর্মান মেয়রসহ ৩ জন মেয়রপ্রার্থীর নাম শুনা যাচ্ছে। তাদের অনেকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলেন, বর্তমান মেয়র ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক, তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন (আনোয়ার কমিশনার), এবং মাধবদী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের প্রার্থীতা জাহির করতে পোস্টার ও ফেইসবুকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয় পৌরবাসীর সমর্থন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসব প্রার্থীরা ইতোমধ্যে ভোটারদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন।
এছাড়াও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন, নরসিংদী জেলা জাপার সহ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র সফি উদ্দিন সাফি, নরসিংদী সদর উপজেলা জাপার সভাপতি নূরুল ইসলাম এবং জেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসানাৎ। তবে সাবেক পৌর মেয়র সফি উদ্দিন সাফি সরকার দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে তিনি জানান।
সফি উদ্দিন সাফি বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে এমপি নজরুল ইসলাম হিরু সাহেবের সাথে বলেছি। জোটের পক্ষ থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবো।
এদিকে বিএনপি’ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী উল্লেখ যোগ্য কারো নাম শুনা যায়নি। অনেকে বলছে নির্বাচনের পরিবেশ বুঝে শেষমেশ হাজী ইলিয়াছ আবারও ধানের ছড়া হাতে নিয়ে মাঠে আসতে পারে।
মাধবদী পৌরসভার বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে মাধবদী পৌরসভার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
মাধবদী পৌর এলাকা ঘুরে নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য মেয়র ও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এবং মহিলা কাউন্সিলর পদে নতুন পুরনো মুখ মিলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন প্রার্থীর সক্রিয় তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা প্রচারণা ও তৎপরতায় মাঠে রয়েছেন। অন্যকোন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঠে সরব ভূমিকা নেই বললেই চলে।
এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনোনয়ন দৌড়ে শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের মধ্যে লড়াই হতে পারে।
মাধবদী পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হিসেবে এলাকায় রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। পিতা মরহুম লোকমান হোসেন প্রধান আমৃত মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ছোট ভাই আলী হোসেন শিশির নরসিংদী চেম্বার প্রেসিডেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত নির্বাচনে মোশাররফ হোসেন মানিক দলীয় টিকেট বাগিয়ে নিয়ে নৌকার কান্ডারি হিসেবে প্রথমবারের মত মাধবদী পৌরসভাকে আওয়ামী লীগের দখলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তা উপহার দেন। তিনি বিএনপি দলীয় মাধবদীর জনপ্রিয় মেয়র হাজী ইলিয়াছকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হবার পর পৌর এলাকাকে ঢেলে সাঝাতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজে হাত দেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করার কয়েকটি অভিযোগও উঠেছে।
মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক বলেন, আমি মাধবদী পৌরসভার জনগণের বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। দল আমাকে আবারো মনোনয়ন দিলে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো এবং সন্ত্রাস, ভূমিদস্যূ ও চাঁদাবাজমুক্ত শহর গড়ে তুলবো।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তরুন সমাজের অহংকার হিসেবে পরিচিত নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন (আনোয়ার কমিশনার) সর্বমহলেই রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহন যোগ্যতা।
পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। তার পিতা মরহুম হাজী মো: আবু ছাইদ মাধবদী পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মা মরহুমা সুফিয়া বেগম ছিলেন নরসিংদী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা। বড় বোন মোসা: লাভলী আক্তার বদরুনেছা কলেজ শাখা ছাত্র লীগের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ভৈরব উপজেলা আ’লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এবং ভৈরব পৌর কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র। ছোট ভাই মো: জাকারিয়া মাধবদী পৌরসভার কাউন্সিলর এবং নরসিংদী সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সফল সভাপতি। ছাত্র জীবনে আনোয়ার হোসেন মাধবদী কলেজে পর পর দুইবার জিএস নির্বাচিত হন । ২০০৩ সালে মাধবদী পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে তার সরব উপস্থিতি কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দলীয় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগে থেকে দলীয় দায়িত্ব পালনে নিজেকে প্রমান দিয়েছেন বারংবার। রাজনীতির মাঠে তিনি সবার আগে থাকলেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাকে বরাবরই পিছনে রাখা হয়েছে। তিনি ২০১১ সালে মাধবদী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হলেও নির্বাচনের মাত্র ৭ দিন আগে দলীয় নেতাদের অনুরোধে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি দলীয় স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে আসলেও দলের জেলা পর্যায়ের উচ্চ নেতারা তাকে দেওয়া কথা রাখেননি। পরবর্তী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হলে তাকে দেওয়া কথা না রেখে অন্য একজনকে দলীয় সমর্থন দেন। বিগত জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তাকে বঞ্চিত করা হয় বলে তিনি জোনাকী টেলিভিশনকে জানান।
তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগ দলীয় একজন প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। সে কারণে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের জন্য আন্দোলন, সংগ্রামে কখনো পিছপা হয়নি। রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিচার-বিশ্লেষণ করলে দায়িত্বশীল কর্মী বিবেচিত হয়ে দলীয় হাইকমান্ড মাধবদী পৌরসভার মেয়র পদে আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে আমি তাদের আস্থা রাখতে পারব ইনশাল্লাহ।
মাধবদী বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ইতোমধ্যে তার প্রার্থীতার কথা জানান দিয়েছেন। পৌর এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে মেয়র পদে দোয়া চেয়ে তার পোস্টার সাটানো আছে। তিনি বলেন, মাধবদী পৌর এলাকার ব্যবসায়ী মহলসহ সাধারণ মানুষ আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। আমি এলাকার সাধারণ জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে মেয়র নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার তিলোত্তমা মাধবদী শহর উপহার দেবো ইনশাল্লাহ।