আল আমিন রনি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রকাশ্যে কিংবা রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। প্রশাসনের একাধিক অভিযানের পরও থামছে না এই ধ্বংসযজ্ঞ। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে দেখা দেবে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়। হারিয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য, বাড়বে ভূমিধসের ঝুঁকি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী চক্র প্রশাসনের নজরদারির ফাঁক গলে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে। কেউ কেউ পাহাড় কেটে বসতিও গড়ে তুলছেন। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা নিলেও স্থায়ী কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার দীঘিনালা, মাটিরাঙা, রামগড়, গুইমারা ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হচ্ছে। এসব এলাকার পাহাড়ের মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জমি ভরাট ও বাড়ি নির্মাণের জন্যও অনেকে মাটি সংগ্রহ করছেন।
পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, “যদি এখনই পাহাড় কাটা বন্ধ না করা হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় নামবে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বর্ষা এলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে, প্রাণহানি হয়। উন্নয়নের নামে পাহাড় না কেটে বিকল্প প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, “বিভিন্ন সময়ে পাহাড় কাটার ঘটনায় স্কেভেটর জব্দ ও একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। জেলায় ২০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান আহমদ বলেন, “অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অপরাধে ইতোমধ্যে একজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সম্প্রতি দীঘিনালার ছোট মেরুং এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির সময় মো. নুরুল হক নামের একজনকে হাতেনাতে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে ইউএনও মো. মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে চালানো এ অভিযানে অনুমোদনহীনভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগে তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা পরিশোধ করেন।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। প্রশাসনের অভিযান সাময়িকভাবে তা বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবার শুরু হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করেন, প্রশাসনের কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও পাহাড় কাটা থামছে না, কারণ এর পেছনে রয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এই চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে পুরো অঞ্চল ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
Leave a Reply