মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী
চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। করোনা পরিস্থিতির এসময়ে সারাদেশে আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে সনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে নরসিংদীতেও প্রতিদিন সংক্রমিত রোগির সংখ্যা রাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করায় দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত বাবুরহাটে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ হাটে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যাহত হচ্ছে । গত কয়েকদিন ধরে করোনা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন সমাজকে।
সচেতন মহল মনে করেন, সচেতনতাই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের একমাত্র উপায়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে নরসিংদী জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাস্কসহ সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার সেই সাথে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলাচলের কথা বলা হলেও মানা হচ্ছেনা তার একটিও। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারসহ জনবহুল স্থানগুলোতে অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার ছাড়াই অবাধে বিচরণ করছে। নিরাপদ দূরত্বে বিষয়টি যেন অনেকের বোধগম্য নয়।
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত বাবুর হাটে করোনা পরিস্থিতির এই সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ হাটে আসা ব্যক্তিদের ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা। নরসিংদী জেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শিলমান্দী ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাপড়ের বাজার বাবুরহাট। দেশের এই পাইকারি কাপড়ের বড় বাজার বাবুরহাটে প্রতিদিন হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। তাই এথানে করোনা সংক্রমনের ঝুকিও বেশী। ঈদের মৌসুমে প্রতিদিন এ হাটে প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেনও হয়ে থাকে।
বাবুরহাট দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতা এখানে ভিড় করছেন। সামনে রমজান মাস তাই বাজারে দিন দিন ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি: পাওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বিষয় উপেক্ষিত হচ্ছে বাবুরহাটে। তাই জেলায় করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ছে। এরই মাঝে জেলায় করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা দিন দিন উর্ব্ধমুখি, বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
সর্বত্র মাস্ক ব্যবহারে সরকারী নিদের্শনা থাকলেও হাটের অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা তা থেকে বিরত থাকছেন। দোকানগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতারা গা ঘেষাঘেষি করে পন্য কেনাবেচা করতে দেখা গেছে।
দোকান মালিকদের দাবী করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি তাদের মাথায় রেখে হ্যান্ড ওয়াশসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা আছে দোকানগুলোতে এবং আগত ক্রেতাদেরকে তা ব্যবহারেরও নির্দেশনা দেন। নিরাপদ দুরত্বে বিষয়ে বলেন দোকানদারি করতে গিয়ে অনেকটা বে-খেয়ালেই একে অপরের গা ঘেষাঘেষি করে বসে।
বাবুরহাটে প্রতিদিন হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে করোনা সংক্রমনের ঝুকি বিবেচনায় এনে এখনই প্রয়োজনী ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা সচেতন মহলের।
আমানত শাহ লুঙ্গির মার্কেটিং প্রধান কবির হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে বাবুর হাটে অমরা ব্যবসা পরিচালনা করছি। আমাদের শো-রুমে প্রতিটি বিক্রয় প্রতিনিধি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা করছে। ক্রেতাদের হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া ছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য তা রাখা আছে।
জানা যায় বিগত করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশ যখন লকডাউনে অচল হয়ে পড়লে গত ৩১ মার্চ থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের অংশ হিসেবে এ বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয় । কিন্তু ব্যবসায়ীদের দুর্দশা ও আসন্ন ঈদ উপলক্ষে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে সীমিত আকারে এ বাজার খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরে ব্যবসা কার্য পরিচালনার জন্য ওই সময়সীমা বৃদ্ধি করে ১৬ মে করা হয়।
করোনা সংক্রমন ও মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ১৬ মে পূনরায় দেশের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার বাবুরহাট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসন।
দেশে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলে ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা এনে বন্ধ হওয়া বাবুরহাট খুলে দেওয়ার ঘোষনা দেয় জেলা প্রশাসন। হাট খুলে দেওয়ার ঘোষণায় বাবুরহাট বণিক সমিতি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুরো বাজার এলাকায় কয়েক দফা জীবানুনাশক ছিটিয়ে দেয়। হাটের মোড়ে মোড়ে আগতদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। বনিক সমিতির এ উদ্যোগ ব্যবসায়ীসহ জেলাবাসীর কাছে বেশ প্রসংশিত হয়।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিদিন সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাবুরহাটে আহত ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে বনিক সমিতি থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে কিনা এমন এক প্রশ্নে জোনাকী টেলিভিশনের মুখোমুখি হয় বনিক সমিতির সভাপতি ও শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বাকির। তিনি প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যূ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি সত্যি উদ্বেগের। এ বিষয়টি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। গত কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে নরসিংদীর সবচেয়ে প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা সফর আলী ভূইয়ার মৃত্যূ হয়েছে। যা আওয়ামী লীগসহ আমাদের জন্য অপূরণীয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে থাকলেও সরকারী কোন নির্দেশনা নেই। জেলার প্রশাসনও এব্যাপারে এখনও পর্যন্ত উদ্বেগি হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা এলে আমরা বনিক সমিতি তার প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’
Leave a Reply