1. mostafa0192@gmail.com : admin2024 :
  2. arswaponbd6@gmail.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব শিশু শ্রমিক দিবস আজ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ জুন, ২০২১
  • ১৯৬ বার পঠিত

শামীমা নাসরিন লিপা:

১২ জুন বিশ্ব শিশু শ্রমিক প্রতিরোধ দিবস ” শিশুরা শ্রমের হাতিয়ার নয়। বর্তমানে বেঁচে থাকার তাগিদে কিংবা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে কোমলমতি শিশুদেরও প্রচুর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে। ফলে তারা নানা রকম শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এমনকি মৃত্যুবরণও করছে।বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ শনিবার (১২ জুন)। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০২ সাল থেকে জুন মাসের ১২ তারিখে দিবসটি পালন করা শুরু করে।

এ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা শামীমা নাসরিন লিপা বলেন , করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিশুশ্রম বাড়ছে এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর বহু মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে নেমে আসছে। ফলে তারা শিশুদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। এতে জীবন ও জীবিকার জন্য বহু শিশুকে কাজ করতে হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১৫২ মিলিয়ন শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। যাদের মধ্যে প্রায় ৭২ মিলিয়ন শিশু বিপজ্জনক কাজে জড়িত। শিশুশ্রম দেশব্যাপী একটা বড়ো সমস্যা। শিশুরা শ্রমের হাতিয়ার নয়, জাতির ভবিষ্যৎ; শিশুদের হাতে ভিক্ষার থলে নয়, চাই বই ও কলম। তারা বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রি করেও প্রকৃত মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুদের কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে আসছে। শিশু শুধু মাতা-পিতা নয় জাতির আশা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নের অপর নাম। সাধারণভাবে জন্ম থেকে আঠারো বছরের কম বয়সি মানুষের পরিচয় হলো শিশু। সে আগামী দিনের একজন প্রত্যাশিত কর্মক্ষম মানবসম্পদ। সঠিক পরিচর্যায় প্রাপ্য সকল মৌলিক অধিকার আর মর্যাদা নিয়ে তার বেড়ে ওঠার কথা। কিন্ত আর্থসামাজিক টানাপোড়েন আর জীবনের বাস্তবতায় কোনো কোনো শিশুকে শৈশব আর কৈশোরের সব চাওয়া-পাওয়া, আনন্দকে বিসর্জন দিতে হয়। পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে হয় অনেক সময়। শিশুশ্রম শিশুর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, শিশুর শৈশব কেড়ে নেয় এবং শিশুকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও শিশুশ্রম বলতে বুঝিয়েছে এমন শ্রম যা শিশুকে শৈশব থেকে বঞ্চিত করে তাদের সকল সম্ভাবনা ও মর্যাদা নষ্ট করে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে বয়সে একজন শিশুর বই, খাতা, পেন্সিল নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া এবং আনন্দিত চিত্তে সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সেই শিশুকে নেমে পড়তে হয় জীবিকার সন্ধানে। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেক মাতাপিতা ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। স্বল্পশিক্ষিত মাতাপিতা দারিদ্র্যের কষাঘাতে যখন পরিবারের ভরণপোষণে ব্যর্থ হন তখন তারা সন্তানকে স্কুলে পাঠানো এবং লেখাপড়ার খরচ জোগাতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তারা মনে করেন, সে যদি কাজে নিয়োজিত থাকে তাহলে সংসারের আয় সংকুলানে সহায়ক হয়। শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম বন্ধের অঙ্গিকার করেছে। বাংলাদেশে শিশুশ্রমের প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে অর্থনীতি। তাছাড়া নদীভাঙন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক শিশু মাতাপিতার সাথে ছিন্নমূল মানুষ হিসেবে শহরে আসে কাজের সন্ধানে। এমন বাস্তবতায় কিছু মুনাফালোভী লোক স্বল্প মজুরির বিনিময়ে শিশুদের কাজে লাগায়। আবার সুযোগ পেয়ে অধিক সময় কাজে নিয়োজিত রাখে। প্রধানত দুটি সেক্টরে বাংলাদেশে শিশুশ্রম বিরাজমান।

আনুষ্ঠানিক খাত যেমন শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, জাহাজভাঙা ইত্যাদি এবং অনানুষ্ঠানিক খাত যেমন- কৃষি, পশুপালন, মৎস্যশিকার/ মৎস্যচাষ, গৃহকর্ম, নির্মাণকর্ম, ইটভাঙা, রিকসা-ভ্যান চালানো, দিন মজুরি ইত্যাদি। কিন্তু সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করার ক্ষেত্রেও শর্ত আরোপ করা হয়েছে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা ২০১০ এ। এতে ১৮ বছরের নীচে শিশুকে কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে অল্প মজুরি দিয়ে অধিক কর্মঘণ্টায় নিয়োজিত রাখা যায় বলে তাদের কাজে নিয়োগ দিতে মালিকপক্ষের আগ্রহ বেশি থাকে। অনেক সময় কোনো মজুরি ছাড়াই পেটেভাতে কিংবা সামান্য মজুরিতে শিশুদের কাজে রাখা হয় । বাংলাদেশ সংবিধানে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমসহ সবধরনের শ্রমসাধ্য কাজ থেকে শিশুদের প্রত্যাহার করে তাদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলাই জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালার লক্ষ্য। এ নীতিমালায় শিশু বিকাশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো শিশু দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করে; নিরাপত্তাহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে; সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে; বিশ্রাম বা বিনোদনের কোনো সুযোগ না পায়; যা তার শিক্ষাজীবন ব্যাহত করে এবং এমন কোনো কাজে নিয়োজিত হয় যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অমর্যাদাকর তবে মালিক বা নিয়োগকর্তা শিশু অথবা তার অভিভাবকের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। চুক্তি অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুকে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কাজের সম্পূর্ণ শর্ত থাকতে হবে, যাতে দৈনিক কর্মঘণ্টা, কর্মতালিকা, নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত বেতনসহ সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন ছুটির উল্লেখ থাকবে। লেখাপড়া অথবা দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং চাকরিচ্যুতির কমপক্ষে একমাস পূর্বে অবহিত করতে হবে। শিশুরা সহজেই কারিগরি বিষয় রপ্ত করতে পারে, এজন্য শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রচলিত আইনের আলোকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ নীতিমালায়। যাতে আগামী দিনে তারা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজেদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

সাধীনতার পর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রবর্তন করা হয় শিশু আইন ১৯৭৪। পরবর্তীতে জাতীয় শিশুনীতি-১৯৯৪ প্রণয়ন করা হয়।শিশুদের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০০৫-২০১০ গ্রহণ করাসহ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুসমর্থনে বাংলাদেশিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং তৈরি পোশাক শিল্প থেকে শিশুশ্রম প্রত্যাহারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তারপরও শিশুশ্রম নিরসন তথা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে শিশুদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এখনো সম্ভব হয়নি। সরকার প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন হবে আশা করা যায়। আর ২০২৫ সালের মধ্যে নিরসন হবে সব ধরনের শিশুশ্রম। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ এবং যথাযথ বাজেট বরাদ্দের পূর্ণ ব্যবহার হলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশল আজ তৃতীয় বিশ্বের বহুদেশের জন্য একটি মডেল। আজকে যে শিশু বা কিশোর, আগামী দিনে সেই হবে এ উন্নয়ন কৌশলের মূল চালিকাশক্তি। তাই শিশু অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তেমনি দারিদ্র্য দূরীকরণে আরো মনযোগী হতে হবে। সবাই মিলে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে একটি সুন্দর দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হবে। দেশ ও জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে এবং শিশুশ্রমের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Jonaki Media and Communication Limited
Design By Khan IT Host