মো. মোস্তফা খান, নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর রায়পুরায় আড়িয়াল খাঁ নদীর দু’পাশে অবৈধ দখলদার ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিষাক্ত বর্জ ও ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে দুষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব¡ হারাতে বসেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী নদ আড়িয়াল খাঁ। বিলীন হয়ে যাচ্ছে জলজ প্রাণী।
নরসিংদী ও নরসিংদীর আশেপাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হয়ে এই নদীটির অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুুখীন হয়ে পড়েছে। মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য। নরসিংদীতে গড়ে উঠা শিল্প কারখানার ক্ষতিকর বর্জ্য সহজেই মিশে যাচ্ছে নদীর পানিতে। এই সব বর্জ্যরে কারণে আড়িয়াল খাঁ নদের পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। বিবর্ণ হয়ে কালচে রং ধারণ করেছে নদের পানি। এতে নদের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে মাছসহ অনেক জলজ প্রাণী। প্রতিদিন দূষণের মাত্রা বাড়ায় হুমকিতে জলজ প্রাণীসহ মানুষের জীবন জীবিকা।
এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। যারা ইটিপি চালাচ্ছেনা তাদের আমরা ধরছি। প্রয়োজনে কারখানা বন্ধের ব্যবস্থ্যা নিচ্ছি। আমরা অলরেডি প্রতি কারখানায় আইপি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা ইটিপি চালাবেনা তারা ধরা পড়বে ।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ, ডৌকারচর, আদিয়াবাদ, পলাশতলী ও মরজাল ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদীটি এক সময় এ এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের মূল চালিকা শক্তি ছিল। ঐতিহ্যবাহী হাসনাবাদ বাজার ও রাধাগঞ্জ বাজারের সাথে যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা ছিল নদীটির। পাশাপাশি নদী পাড়ের কৃষি জমিগুলো যেমন ছিল ফসলে ভরা, তেমনি নদীর পানিতে ছিলো প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছের সমাহার।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ও অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি দূষিত হয়ে লাল ও কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে নদীতে জীব বৈচিত্র্যের অস্তিত্ব। নদীর মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। নদী থেকে শুধু কৃষি ফসল বা মাছের প্রাচুর্য হারিয়ে গেছে এমন নয়। অব্যাহত দখল ও বিষাক্ত বর্জ্যে দূষণের ফলে এলাকাবাসীর অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে নদীটি। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক জেলে পরিবার। সেচ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে বোরো ধানের আবাদ। তাছাড়া দূষিত পানির গন্ধে নদীর তীরে গড়ে উঠা ঐতিহ্যবাহী সরকারি আদিয়াবাদ ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্জ্য, ময়লা, বালি ও মাটি ফেলে অবাধে নদীর পাড়ের জায়গা দিনের পর দিন ভরাট করে নদী দখল করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। নদীর অনেকটা অংশ ইতিমধ্যে দখল করে ফেলেছে তারা।
সরকারি আদিয়াবাদ ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ নুর সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী হাসনাবাদ ও রাধাগঞ্জ বাজার সহ ছোট বড় অনেক বাজার গড়ে উঠেছে। এই নদীর মাছ অনেক সুস্বাদু ছিল। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এই নদীতে। বর্তমানে শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। মাছ মরে ভেসে উঠছে। নদীর তীরে গড়ে উঠা সরকারি আদিয়াবাদ ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে। অবিলম্বে এর প্রতিকার না হলে মৎস সম্পদ, পশু সম্পদ সহ মানবজীবন বিপন্ন হবে ।
ডৌকারচর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ ফরাজী বলেন, নরসিংদীতে গড়ে উঠা শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্যে আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে নদীর মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। নদীর তীরে চাষকৃত বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া কিছু লোক নদীতে বালু ফেলে স্থাপনা নির্মাণ করে নদী দখল করছে এতে করে বিপন্ন হচ্ছে মানবজীবন। আমরা এই নদী দূষণ বন্ধ ও অবৈধ দখল বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছি। অবিলম্বে আড়িয়াল খাঁ নদীসহ আশেপাশের সকল নদী দূষণ বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আজগর হোসেন বলেন, আমরা নদী দূষণের বিষয়টি নিয়ে জেলা মিটিং এ আলোচনা করেছি। জেলা প্রশাসক স্যার পরিবেশ অধিদপ্তরকে শিল্প কারখানাগুলোতে ইটিপি চালু করা সহ তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে শিল্প কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে আসা রোধ হয়।
Leave a Reply