নিজস্ব প্রতিবেদক
‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’—হুইলচেয়ারে চেপে এই গানটি গেয়ে মঞ্চ কাপিয়ে ছিলেন, কেঁদেছেন নিজে, কাঁদিয়ে ছিলেন উপস্থিত শ্রোতা ভক্তদের। বলছিলাম দেশ বরেণ্য কন্ঠ শিল্পি এন্ড্রু কিশোরের কথা। কিংবদন্তি এই শিল্পি দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে লাখো ভক্ত শ্রোতাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে।
অবশেষে মারণব্যাধি ক্যানসারের কাছে হার মেনে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন দেশ বরেণ্য এই প্লেব্যাক সম্রাট।সেখানে টানা নয় মাস চিকিৎসাধীন থেকে গত ১১ জুন একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে তিনি। তারপর থেকে এন্ড্রু কিশোর রাজশাহীতেই ছিলেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে ছিলেন চিকিৎসা নেন তিনি। নিতে টানা কয়েক মাসের কেমোথেরাপি।
এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানে কণ্ঠ দেন। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গাওয়া গান প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তার জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙের ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।
গান গেয়ে দেশ-বিদেশের সুনামের পাশাপাশি সম্মানও পেয়েছেন কন্ঠ শিল্পি এন্ডু কিশোর। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক তিনি। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক। এন্ডু কিশোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। সিনেমায় প্লেব্যাক করার পাশাপাশি একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে। ১৯৮৭ সালে তিনি বরাবর আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর, দিদারুল আলম বাদল, শামসুল ইসলাম নান্টু সাথে টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য ‘প্রবাহ’ ওই বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অনন্য অবদানের জন্য তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
কালজয়ী এই সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খালিদ হোসেনসহ বিশিষ্টজনেরা শোক জানিয়েছেন। তার মৃত্যুর খবরে শোকে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
জোনাকী টেলিভিশন/এসএইচআর/৬ জুলাই ২০২০ইং
Leave a Reply