1. mostafa0192@gmail.com : admin2024 :
শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কদর বাড়ছে নরসিংদীর লটকন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০
  • ২৩৩ বার পঠিত
নরসিংদীর লটকান

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বুগি’ নামে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লটকন দেশি জাতের একটি ফল । একসময়ে একে জংলি ফল বলা হতো। বনে-বাদাড়ে ঝোপ-ঝাড়ে জন্ম নেওয়া গাছে ধরে থাকতো এ ফল। তেমন একটা কদর ছিল না। তবে সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জেনে গেছে। তাই কদর বেড়েছে বহুগুণ। বাণিজ্যিক চাষের পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, মানুষের শরীরে একদিনে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন মাত্র তিন থেকে চারটি লটকন সে চাহিদা মেটাতে পারে। ছোট এ ফলটি ভিটামিন ‘বি-টু’, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর। যা এই করোনাকালে আমাদের সবার শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

সুস্বাদু টক-মিষ্টি লটকনের কথা এলেই নরসিংদীর নামটা চলে আসে সবার আগে। কারণ এ অঞ্চলের লটকন অন্য যে কোনো জেলার উৎপাদিত লটকনের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে মিষ্টি এবং রসালো হয়। এখানকার বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে ফলটির ফলন ভালো হয়। সেজন্য এ জেলার মানুষজন লটকনের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছে। প্রতিবছরই বাড়ছে লটকন চাষের সংখ্যা ও এর উৎপাদন। আর্থিকভাবে বেশ লাভবানও হচ্ছেন এ জেলার চাষিরা। লটকন চাষ করে ভাগ্যবদল হয়েছে হাজারো কৃষকের। এবার ফলন ভালো হলেও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ন্যায্য দাম পাবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন চাষিরা।

সুস্বাদু লটকন

স্থানীয়দের কাছে এ ফলটিকে ‘বুগি’ নামে বেশি পরিচিত। গাছটির কাণ্ড থেকে বের হওয়া এ লটকনের থরে থরে ঝুলে থাকার দৃশ্য যে কারোরই নজর কাড়বে। বর্ষায় ভিজে থাকা প্রকৃতিতে এ দৃশ্য আরও বেশি ফুটে ওঠে।

লটকন গাছ সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণের উপযুক্ত সময়। বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়। লটকনের গাছ লাল মাটিতে ঝোপের মতো হয়ে থাকে। প্রতিবছর মাঘ-ফাল্গুনে লটকন গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে এ ফল পরিপক্কতা পায়। এটি চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। স্ত্রী গাছ লাগিয়ে দিলেই হয়। সময়ে সময়ে একটু পরিচর্যা করতে হয়। গোড়ার চারদিকে জৈব সার দিলে ফলন ভালো হবে। পিঁপড়া বা পোকামাকড়ের হাত থেকে ফল বাঁচাতে ছত্রাকনাশক দিতে হয়।

ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লটকন

নরসিংদী জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল  মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান, তাই এখানে লটকনের ভালো ফলন হয়। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে লটনকনের বাগান করা হয়েছে। যা হেক্টর প্রতি ১৫ টন হারে ২৪ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন (এক টন সমান ১০১৬ কেজি) লটকনের ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ। আর উৎপাদিত এ লটকন পাইকারি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মূল্য পাওয়া যাবে প্রায় ১৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

কৃষি অধিদপ্তর জানায়, রোপণের তিন বছরের মধ্যে লটকন গাছে ফলন আসে। প্রতিটি গাছ ফল দেয় টানা ২০ থেকে ৩০ বছর। লটকন গাছের রোগবালাই তেমন দেখা যায় না। ফল সংগ্রহের ৬০ দিন আগে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম পটাশ পানির সঙ্গে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিলে ফলের মিষ্টতা ও আকার বৃদ্ধি পায়।

এ ফল চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিক্রির জন্য কোনো টেনশন করতে হয় না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লটকন কাঁচা থাকা অবস্থায় বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায়। বাগান কেনার পদ্ধতিতে রয়েছে ভিন্নতা। প্রথমে বাগানের মালিকের কাছ থেকে একদল পাইকার দাম-দর করে বাগান ক্রয় করেন, পরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাকা লটকন বাগান থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। প্রকারভেদে পাইকারি মণ প্রতি দাম ওঠে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

সুস্বাদু টক-মিষ্টি নরসিংদীর লটকন

জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে নরসিংদীর  সু-স্বাদু এ লটকন ফল। কিন্তু এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বাইরে রপ্তানি করার সম্ভব হবে কি তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা মাঝে।

এদিকে মৌসুমী এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল, বেলাবরের বাড়ৈচা, পলাশের রাবান ও শিবপুর উপজেলা সদরে ও যোশরে বসছে লটকনের পাইকারী বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন লটকন। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হয়ে লটকন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারে। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে লটকন কিনে সরবরাহ করছেন।

শিবপুর উপজেলার জয়নাগর ইউনিয়নের কামরাব গ্রামের আলমগীর হোসেন জোনাকী টেলিভিশনকে বলেন, কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে লটকন একমাত্র । লটকন বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ বেশি পড়লেও পরবর্তি সময়ে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। সে তুলনায় লাভ বেশি হয়। এছাড়া লটকন ফলের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে গাছের কাণ্ডে ফল ধরে। কখনও কখনও এত বেশি ফল আসে যে গাছের ডাল পর্যন্ত দেখা যায় না। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামের বাগান মালিক মানিক মোল্লা  জানান, লটকন ফল বিক্রির ভাবনা ভাবতে হচ্ছে না তাদের। স্থানীয় বাজার ছাড়াও লটকনের ফল ধরার পর জমিতেই পাইকারি বিক্রি করে দেওয়া যায়। পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দুই একর জমিতে লটকন বাগান  করেছেন। এ বছর একটি লটকন বাগান ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং আরেকটি বাগান ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাছাড়া শিবপুর ও মরজাল বাজারেও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ক্রেতারা আসছেন লটকন নিতে।

নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক শোভন কুমার ধর জোনাকী টেলিভিশনকে বলেন, লটকন চাষ বৃদ্ধিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া লটকনে রোগ বালাইয়ের তেমন সংক্রমণ না হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম ফলনও ভালো হয়। বাজারে লটকনের ন্যায্য দাম পাওয়ায় লটকনচাষিও লাভবান হচ্ছেন।

জোনাকী টেলিভিশন/এমএইচএম/এসএইচআর/৩০-০৬-২০ইং

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Jonaki Media and Communication Limited
Design By Khan IT Host