1. mostafa0192@gmail.com : admin2024 :
  2. arswaponbd6@gmail.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

মাধবদীতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু

মনিরুজ্জামান
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১
  • ৮২৭ বার পঠিত

মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি

নরসিংদীর মাধবদীতে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে জেলার মাধবদী থানাধীন কাঠালিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ওই নবজাতকের মা  প্রসূতি কুলসুম বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

প্রসূতি কুলসুম বেগম বলেন, গত শুক্রবার রাতে আমার হালকা পানি ভাঙ্গা দেখা দেয়। পরে রাতেই ডাক্তার ফৌজিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে কিছু পরীক্ষা দেন এবং পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। তার কথা মতো পরীক্ষা করিয়ে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তার সাথে দেখা করি।তিনি আমাকে দেখে বাচ্চার পজিশন, হার্টবিট এবং জরায়ুর মুখ সহ সবকিছু ঠিক আছে বলে আমার শরিরে দুটি ইনজেকশন পুঁশ করেন এবং স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে বিশ্রামে থাকতে বলেন। দুপুরের পর কোন ধরনের পরিবর্তন না হলে তিনি এবং তার সহকর্মীরা আমার পেটে চাপ প্রয়োগ করে। তাদের চাপ সহ্য করতে না পেরে আমি ডাক চিৎকার শুরু করি এবং নরমাল ডেলিভারি না করিয়ে সিজারের মাধ্যমে ভেলিভারি করানোর কথা জানাই।

কিন্তু তারা আমার কথায় কোনপ্রকার কর্ণপাত না করে পেটে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে জীবণ বাঁচাতে জোরপূর্বক আমি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে অটো রিকশায় উঠে পড়লে তারা পুনরায় অটোরিকশা থেকে জোড় পূর্বক নামিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তারপর পেটে চাপ দিয়ে মৃত বাচ্চা প্রসব করান। এধরনের কসাই ডাক্তার দিয়ে ডেলিভারী করাতে গিয়ে কেউ যেন আমার মতো সন্তান হারা না হয়। আদরের ধনকে হারিয়ে তিনি এখন পাগল প্রায়। তিনি এ কসাই ডাক্তার ফৌজিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

কুলসুমের বৃদ্ধা মা বলেন,আমার মেয়ের পেটে তারা পরপর চাপ দিতে থাকলে সে সহ্য করতে না পেরে ডাক চিৎকার শুরু করে। উপায় না দেখে আমি এবং আমার মেয়ে ডাক্তারের পায়ে ধরে মিনতি করেছি তবুও তাদের মন গলেনি, তারা আমার মেয়েকে ছাড়েনি। জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে আমার নাতিকে মেরে ফেলেছে।আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

আরেক ভুক্তভোগী জয়দেব ভৌমিক বলেন, গত দুই মাস পূর্বে রাত দুইটার দিকে আমার প্রসূতি স্ত্রীর হালকা ব্যাথা ও পানি ভাঙ্গা দেখা দিলে রাতেই গৌরীকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তিনি সকালে তাকে কাঠালিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলে।

সকালে আমি আমার স্ত্রীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে ডাক্তার ফৌজিয়া তার শারীরিক পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দুইটি ইনজেকশন পুশ করে এবং বলে বাড়ি চলে যান ব্যাথা উঠলে নিয়ে আসবেন।

কিন্তু বাড়িতে এসে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ব্যাথা না উঠায় পুনরায় ডাক্তার ফৌজিয়ার স্মরনাপন্ন হলে তিনি বিভিন্ন কৌশলে চাপ প্রয়োগ করে একটি ছেলে বাচ্চা প্রসব করান।দুইটি মেয়ের পর একটি ছেলে বাচ্চা প্রসবের খবর পেয়ে আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু মুহূর্তেই আমাদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। বাচ্চা প্রসবের পর আমার স্ত্রীর কোলে যখন বাচ্চা দেয় তখন বাচ্চা কোন ধরনের নড়াচড়া না করলে আমি ডাক্তারকে বিষয়টি জানালে তিনি তাড়াতাড়ি অক্সিজেন দেওয়ার জন্য নবজাতককে আড়াইহাজার নিয়ে যেতে বলেন। আমরা দ্রুত আড়াই হাজার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক ঘন্টা পূর্বেই বাচ্চা মারা গেছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান ।আমার একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে আমার পরিবারটি এতিমের চেয়ে ও বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। তাছাড়া আমার স্ত্রীর জরায়ুর ভেতরে ফুল রেখেই তারা তাকে ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে অন্য হাসপাতালে নিয়ে এই ফুল পরিস্কার করতে গিয়ে আমার প্রায় ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার স্ত্রী এখনো পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারে নি।

এই ঘটনার সঠিক বিচারের জন্য আমি অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কিন্তু আমি এর কোন বিচার পাইনি। এর বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকির শিকার হয়েছি। সে আরো অনেক নবজাতকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। আমার মতো যেনো কারো আর সন্তান হারাতে না হয় ভগবানের নিকট সেই প্রার্থনা করি,যার হারায় একমাত্র সেই হারানোর ব্যাথা বুঝে। আমি এই মানুষ খেকো ডাক্তারের উপযুক্ত বিচার চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী বলেন,এখান থেকে ডেলিভারী করাতে গেলে ডাক্তার ফৌজিয়া প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ঔষধ লিখে দেন এবং সেই ঔষধ তার  পছন্দের লোক মিজানের দোকান থেকে  চড়া দামে কিনতে হয়।অন্য কোন দোকান থেকে ঔষধ কিনলে তিনি তার ডেলিভারি করান না।

তাছাড়া রোগীদের জন্য আনা অতিরিক্ত ঔষধ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সরকারী সকল ঔষধ গোপনে মিজানের নিকট বিক্রি করে দেন বলে ও জানান তারা।

এব্যাপারে অভিযুক্ত চিকিৎসক ফৌজিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার উপর আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় রোগী আমার নিকট আসলে আমি পরীক্ষা করে দেখি তার জরায়ুর মুখ খোলা এবং বাচ্চার হার্টবিট ও ভালো আছে। পরে আমি প্রসূতিকে দুইটি ইনজেকশন দিয়ে স্যালাইন দিয়ে রাখি। দুপুর সোয়া একটার দিকে তার ব্যাথা উঠলে আমরা নরমাল ডেলিভারীর চেষ্টা করি কিন্তু প্রসূতির শারীরিক অবস্থা দূর্বল থাকায় তিনি নিজে থেকে কোন ধরনের চাপ দিতে পারছিলেন না বিধায় আমি তাকে সিজারের পরামর্শ দেই। পরামর্শ অনুযায়ী তার স্বামী অটো ডেকে আনলে আমাকে না বলেই তিনি গিয়ে অটোতে উঠে বসেন। আমি বাচ্চার হার্টবিট মাপার জন্য প্রসূতিকে পুনরায় অটো থেকে নামিয়ে আনি। বাচ্চার হার্টবিট মাপার সময় স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চার মাথা বেরিয়ে আসলে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়। পরে দেখা যায় বাচ্চা গর্ভের মধ্যে পায়খানা করে দেওয়ায় সেখান থেকে মিকোনিয়াম মিশ্রিত পানি বের হচ্ছে তাছাড়া নবজাতকের অবস্থা ও সংকটাপন্ন বিধায় অক্সিজেন দেওয়ার জন্য আড়াই হাজার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।

নবজাতক নিহতের ঘটনায় তার কোন ত্রুটি বা গাফিলতি ছিলনা বলেও জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Jonaki Media and Communication Limited
Design By Khan IT Host