মনিরুজ্জামান, মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
নরসিংদীর মাধবদীতে তৃতীয় লিঙ্গের দুই উদ্যোক্তাকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে `ত্রিনয়ন রূপশিল্প’ নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী রূপচর্চা কেন্দ্র গড়ে দিয়েছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক।
মাধবদী থানা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে মাধবদী বাজার বড় মসজিদ রোডে ইসলাম প্লাজায় প্রতিষ্ঠিত রূপচর্চা কেন্দ্রটি সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।
পরে মাধবদী পৌরসভা হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, `তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারী অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এটিই প্রথম বিউটি পার্লার।
নরসিংদীতে সর্বমোট ২০২ জন হিজড়া রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এদের মধ্যে ৮৭ জনকে সরকারী ভাতা প্রদানসহ কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদের ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হবে।
এসময় তিনি সমাজের অবহেলিত হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনদেরকে মানুষ বিবেচনায় সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ্ আলম মিয়া, নরসিংদী জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাপ্তাহিক নরসিংদী সমাচার পত্রিকার সম্পাদক একে ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল পারভেজ মন্টি, নরসিংদী চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির, রমনী গ্রুপের চেয়ারম্যান নিজামুদ্দীন ভুঁইয়া লিটন সিআইপি, নরসিংদী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোতালিব পাঠান, মাধবদী থানা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল-আমিন সরকার, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহিন, কোষাধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া বাচ্চু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা বেগম, মোতাহার হোসেন অনিক, নরসিংদী জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, নরসিংদী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও মাধবদী থানা প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, তৃতীয় লিঙ্গের রত্না শেখের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে ও মীম আক্তারের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার কিসমত বানিয়াদী গ্রামে। ১১ বছর আগে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি থেকে বের হন মীম আক্তার। পরে কিছুদিন ঢাকায় অবস্থানের পর অবৈধ পথে ভারতে চলে যায় মীম। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় মুন্সীগঞ্জের রত্নার সঙ্গে। এরপর সেখানে রূপচর্চার প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তারা। পরে মীম আক্তার রত্নাকে সঙ্গে নিয়ে নরসিংদীর নিজ বাড়ি ফিরলেও সামাজিক ও পারিবারিক নেতিবাচক দৃষিভঙ্গি আরও বেড়ে যায়। এতে আবারও বাড়ি ছাড়া হয়ে বাড়ি বাড়ি টাকা তোলা ও অসহায় জীবনযাপন শুরু হয় তাদের। পরে মাধবদী থানা প্রেসক্লাবের মাধ্যমে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার তৃতীয় লিঙ্গের মীম ও রত্না সদর উপজেলা ও নরসিংদী জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। পরে তাদের কর্মদক্ষতা দেখে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।
Leave a Reply