রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি:
একজন বৃদ্ধ বিধবা মহিলা সাইমন বিবি। বয়স ৭২। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার উওরবাখরনগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মৃত আহম্মদ আলীর স্ত্রী। বয়স বেশি হওয়ায় সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন একটি বাঁশের লাঠি। যা দিয়ে মাটিতে ভর করে গোঁচা কোমড় নিয়ে পেটের দায়ে ভিক্ষা করে বেড়ায় মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। এক ছেলে আর দুই মেয়ে সন্তানের জননী এই বৃদ্ধা। দীর্ঘদিন আগে ছেলে সন্তানটি অসুখে মারা যায়। তার পর থেকেই তিনি দুবেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য ভিক্ষাভিত্তির পথ বেচে নেন।
মরার আগে মরতে চান না এই বৃদ্ধ সাইমন বিবি। তাই বেঁচে থাকার জন্য পেটের তাগিদে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্যও তাকে করতে হচ্ছে যুদ্ধ। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভাগ্যে জোটেনি একটি কার্ড। তবে, পাঁচ হাজার টাকা দিলে তার ভাগ্যে জোটতে পারে সোনার হরিণ নামের বয়স্ক ভাতার কার্ডটি।
একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ সাইমন বিবি রায়পুরা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে একটি কার্ড ভিক্ষা চান। ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় সাইমন বিবি বলেন, আমারে একটা কাট দিতানা বাজান! মেম্বরে খুঁেজ, চেয়ারম্যানে খুঁেজ, পাঁচ হাজার টেহা দিতাম। কইত্তে পুত আমি টেহা দেই, আমি দশ ঘর মাইগগা খাই। টেহা দিতারিনা দেইক্কা কাড পাইনা।
বৃদ্ধ সাইমনের মেয়ে মর্জিনা বেগম জানান, গত ২বছর ধরে স্থানীয় ইউপি মেম্বার সামছু মিয়ার পিছনে পিছনে ঘুরছি সহায় সম্বলহীন পরিবার হিসাবে আমাদের একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার জন্য। আমি কার্ড চাইলে তিনি ৫হাজার টাকা দাবী করেন। টাকা না দিলে কার্ড পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে ৭/৮হাজার টাকা লাগে শুধু তোমাদের জন্য ৫হাজার এর কম হলে কার্ড হবেনা। উপায়ন্তর না পেয়ে আমরা যায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নূরুর কাছে। উনাকে বিস্তারিত জানানোর পর তিনি বলেন, কার্ড-মাট করলে টেহা পয়সা লাগে, টেহা ছাড়া কার্ড অয়না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সাইমন বিবি নামে কাউকে চিনিওনা। কোন দিন আমার কাছে আসছে বলে মনে পড়ছে না।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য সামছু মিয়াও টাকা দাবীর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সাইমন বিবির নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড নেই এটা আমার জানা নাই। সে দু’বছর আগে অন্য ওয়ার্ড থেকে আমাদের ওয়ার্ডে এসেছে। আমি তাকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিদা দিয়েছি।
কথা হয় উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ খলিলুর রহমান এর সাথে। তিনি বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। সাইমন বিবি নিজে উপস্থিত হয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। ইউএনও মহদয়ের সাথে আলোচনা করে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply