নিজস্ব প্রতিবেদক
‘যারা আমরারে খাওয়াইতাছে আল্লাহই তাগরে চালাইব’ এই কথাগুলো বলে পরম করুনাময়ের কাছে আয়োজকদের জন্য দোয়া করে প্রায় সত্তর বছর বয়স ছুই ছুই বৃদ্ধা হাজেরা বেগম। তিনি আজ রবিবার (৮ আগস্ট) নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আমরা ক’জন পরিচালিত মেহমানখানায় ষষ্ঠদিনে দুপুরের খাবার শেষ করে এ দোয়া করেন।
বয়সের ভারে নূহ্য লাঠি ভর দিয়ে প্রতিদিন দুপুরের খাবার খেতে মেহমান খানা এসে হাজির হন। খাবার খেয়ে হাসি মুখে ফিরেও যায়। মানুষের বাড়ী বাড়ী ভিক্ষা করে নিজের দু’বেলার অন্নের জোগান দেওয়া কিশোরগঞ্জের নিকলীর এই বৃদ্ধার মুখে আজ ছিল অন্যরকম এক আনন্দের হাসি। অন্যরকম এক আত্মতৃপ্তি। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাবারে আমি অনেক জাগা ঘুরছি, অনেক জাগায় খাওনও খাইছি কিন্তু কোন জাগায় খাওনে (হাতের আপেলটি উচিয়ে) এইগুলান দিতে দেহি নাই। যারা আমরার কথা ভাইব্যা খাওন-দাওনের ব্যবস্থা করছে আল্লাহ হেরার ভালা করব।’
হাজেরা বেগম জানান, স্বামী তার গত হয়েছে অনেক আগেই। দুই ছেলে সন্তান থেকেও নেই। তারা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকেন। বৃদ্ধ মায়ের খোঁজ কোনদিনও নেয় না। জীবিকার তাগিদে কিশোরগঞ্জ থেকে নরসিংদী আসেন। শহরের তরোয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। মানুষের বাড়ী বাড়ী ঘুরে ভিক্ষা করে নিজে পেট চালায়। করোনার কারণে অনেকের বাড়ী ঢুকতে পারেনা তাই আগের মত ভিক্ষাও জুটে না।
নরসিংদীর মেহমানখানায় আজ রবিবার আয়োজন ছিলো কিছুটা ভিন্ন। খাওয়া দাওয়া শেষে মেহমানখানার বৃদ্ধ মেহমানদের হাতে দেওয়া হয় একটি করে আপেল। তাই মেহমানখানা অনাহারী মেহমানদের আত্মতৃপ্তির হাসি হাসতে দেখা গেছে।
রবিবার ষষ্ঠদিনে মেহমানখানার অপ্যায়িত হয়েছে ৩ শতাধিক মেহমান।
মেহমানখানার উদ্যোগতা নরসিংদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাজহারুল পারভেজ মন্টি তার মেহমানদের মুখে এই আত্মতৃপ্তির হাসি দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের এই ছোট পরিসরের এই উদ্যেগে সমাজের অসহায় দরিদ্র কয়েকজন অভুক্ত মানুষের মুখে এক বেলা অন্ন তুলে দিয়ে তাদের কষ্ট কিছুটা লাগব করে ক্ষণিকের জন্য হলেও হাসি ফুটাতে পেরেছি সে কারণে প্রথমে পরম করুনাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাদ আছে সাধ্য নেই। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইতোমধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আমাদের এই উদ্যোগ সাধুবাদ জানিয়ে আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার আকুতি জানিয়েছেন। আমরা আজ দুপুরের খাবারের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক জীর্ণশীর্ণ শরীরের অধিকারী বয়োবৃদ্ধদের হাতে খাওয়ার জন্য আপেল তুলে দিয়েছি।ভবিষ্যতেও আমাদের এমন প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। ইনশাল্লাহ করোনাকালী এ দূ:সময় দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তিনি এ কাজে শুরু থেকে এ পর্যন্ত যারা তার পাশে ছিলেন নরসিংদী মডেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মহশিন শিকদার, অধ্যাপক এ এইচ মিলন ,অধ্যক্ষ সজীব মিয়া, প্রভাশক মাসুদুর রহমান রানা, সাংবাদিক কামরুল ইসলাম সোহেল, সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহাগ,নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডষ্ট্রিজ এর পরিচালক শহীদুল হক পলাশ,প্রভাষক মোঃ সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক নুরুদ্দিন বাদশা ও প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
প্রতিদিনের মত রবিবারও দুপুর ১টা বাজার সাথে সাথে মেহমানখানার মেহমানদের আপ্যায়ন শুরু হয়। এর আগ এখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনির অসহায় কর্মহীন অনাহারীর সমাগম শুরু হয়। মেহমানদের আতিথীয়তা চলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। চেয়ার টেবিলে বসে আয়েশ করে খানাপিনা শেষ করে হাসিসুখে ফিরে যান সুবিদাবঞ্চিত এই মানুষগুলো। সাথে বৃদ্ধদের জন্য যুক্ত হয় একটি করে আপেল।
প্রথম দিন গত ৩ আগস্ট মঙ্গলবার এই মেহমানখানার শুভ কাজের উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো:মেহেদী মোর্শেদ।
ষষ্ঠদিনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সংগে নিয়ে আমাদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা ও মনোহরদী রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক কামরুল ইসলাম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এড. জাহিদ, শফিকুল ইসলাম স্বপন, প্রফেসর এ এইচ মিলন অধ্যাপক, মঈনুল ইসলাম মীরু, অধ্যাপক সজীব মিয়া, নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডষ্ট্রিজ এর পরিচালক শহীদুল হক পলাশ, প্রভাষক মোঃ সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক নুরুদ্দিন বাদশা ও প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ।
Leave a Reply