নিজস্ব প্রতিবেদক
টিনের বেড়া দিয়ে দরবার শরীফের ভক্তবৃন্দের আসা-যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। এমনই একটি ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ভূমি অফিস সংলগ্ন আহমদিয়া দরবার শরীফ নামে একটি মাজারে।। গত সোমবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ওই মাজারের মতুয়াল্লি হোসেন শাহ নরসিংদী প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন।
এসময় অভিযুক্ত পরিবার সদস্য ওয়াজল উল্লাহ বলেন, মাজারের যারা আসে তারা মদ গাঁজা খায় আরে মদ গাঁজার গন্ধে আমার বাড়িতে থাকতে পারিনা তাছাড়া এটা কোন রাস্তা নয় আমাদের বাড়ির অংশ মাত্র, তবে হা বাড়ীর মানুষদের হাটা চলার জন্য এদিক দিয়ে একটি রাস্তা ছিল, সেটা তারাই বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ী মাঝপথ দিয়ে রাস্তা এমন প্রশ্নের তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি। বাড়ির মাঝ পথ দিয়ে রাস্তার চেয়ে এক পাশে থাকাটা ভাল নয় কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের নিজস্ব জায়গা এখান দিয়ে আমরা অন্যদেরকে চলাচলের সুযোগ দিব কেন?
এবিষয়ে ওয়াজল উল্লাহ’র অপর ভাই আজিমপুর ওয়েস্টান স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক এনামুল হক ভূঁইয়া সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনে তিনি জানান আমাদের বাপ চাচারা ৬ ভাই ও এক বোন। দাদার পত্রিক সম্পত্তি হিসেবে 65 টি শতাংশ জমির মধ্যে আমার বাবাসহ ৩ জন ১০ করে ৩০ শতাংশ ভোগ দখল করছি বাকি অংশ তারা একাই দখলে আছে। আগে তারা ভূমি অফিসের ওপর দিয়ে চলাচল করতো। বর্তমানে ভূমি অফিসের সীমানাপ্রাচীর দেওয়ার কারণে তাদের সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য তো আমরা আমাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে তাদেরকে রাস্তা দিতে পারিনা।
উত্তর বাখর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, আমি এ ব্যাপারে কয়েকবার বসেছিলাম বিষয়টির সুরাহা করার জন্য কিন্তু এনামুলরা আমার বিচার মানে না। তাদেরকে বৈঠকে ডাকলে আসে না। আমার কোন সিদ্ধান্ত মানেনা তাই বলে আমি তো জোড়পূর্বক চাপিয়ে দিতে পারিনা। এই ক্ষেত্রে আমি তাদেরকে আর কি করতে পারি?
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের জানায়, দরবার শরীফের পথ বন্ধ থাকায় ভক্তবৃন্দরা অন্যের ফসলি জমির পাশ দিয়ে কোন রকমে আসা যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা আসা-যাওয়ার পথটি দ্রুত খোলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার বাখরনগর এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে বলে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখর নগর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির মোহাম্মদ আলী শাহ ১৯৭৬ সালে নিজ বাড়ীতে তার পীরের নামে আহমদিয়া দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তার একটি মাজারও রয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর দরবার শরীফের ভক্তবৃন্দরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে সীমানা প্রাচীর তুললে দরবার শরীফের সামনের অংশে বসবাসকারী ফকির মোহাম্মদ শাহ’র তিন ভাইয়ের সন্তানদের ঘরের পাশ দিয়ে চলাচলের জন্য একটি সাড়ে ৪ ফুটের পথ করে নেওয়া হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে তিনি মৃত্যূবরণ করেন। তাকে ওই দরবার শরীফের ভিতরেই দাফন করা হয়। তার মৃত্যূ পর ভক্তবৃন্দদের চলাচলে বাদ সাধে মোহাম্মদ আলী শাহ ভাই ভাতিজা এনামুল, কবির, ওয়েজল উল্লাহ ও ফরিদ গংরা। টিনের বেড়া দিয়ে সকলের চলাচলের পথটি তারা বন্ধ করে দেয় এতে দরবার শরীফে আসা ভক্তবৃন্দরা বাধাগ্রস্থ হয়। বাধ্য হয়ে ভূমি অফিসের পিছন দিক দিয়ে একটি ফসলের জমি উপর দিয়ে দরবার শরীফে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদেরকে।
দরবার শরীফে চলাচলে বন্ধ থাকা রাস্তাটিয ঢুকার মুখের বাম পাশের কাঠের দোকান মালিক জানান, আগে দরবার শরীরের লোকজন ভূমি অফিসের উপর দিয়ে আসা যাওয়া করতো। কিন্তু ভূমি অফিস সীমানা প্রাচীর দিয়ে দেওয়ায়। এই রাস্তা দিয়েই লোকজন আসা-যাওয়া করতো। তবে এটি কেন বন্ধ করা হয়েছে তা জানিনা।
রাস্তাটির অপর পাশের দোকানির কাছে বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে অপারগতা স্বীকার করেন। কেন বলতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আরে ভাই কিছু বলতে গেলেতো এরা আরোবেশী ক্ষতি হবে। কেন তা তারাই ভাল বলতে পারবে।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এলাকাবাসী বলেন, ‘যারা রাস্তাটি বন্ধ করেছে, তারা খুব একটা সুবিধার মানুষ নয়। তারা নিজেদের স্বার্থে যে কোন কাজ করতে পারে। তাদেরই এক ভাই বিএনপি নেতা মনির হত্যার সাথে জড়িত এবং দীঘদিন ওই মামলার জেলও খেটেছেন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির মোহাম্মদ আলী সন্তান গোলাম হোসেন (হোসেন শাহ) এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার বাবা তার পীর মুর্শিদ কেবলা আদেশেই ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে তার আদেশেই বসতবাড়ির ছাড়া আমাদের অন্য কোন জায়গা না থাকায় বাড়িতেই এই আহমদিয়া দরবার শরীফটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর আমার অন্য চাচাদের সন্তানরা আমার চাচাতো ভাইয়েরা এই দরবার শরীফ ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। তারা আমাদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়। এ ব্যাপারে আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হলে তিনি নিজে এসে দরবার শরীফে আসা-যাওয়ার জন্য শারে চাট হোটেল একটি রাস্তা খুঁটি গেড়ে দেয়। এখনও সেই খুঁটিগুলো রয়েছে। কিন্তু আমার চাচাতো ভাইয়েরা নিজেদের ক্ষমতার দাপটে চেয়ারম্যানের সেই আদেশকে উপেক্ষা করে আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে গেলে গত ঈদের পরের দিন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল হক ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে আমাদের কে মারধর করা হয়। মারধরের বিচারে থানায় মামলা করতে গেলে রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন বিষয়টি অবগত হলে পূজার পরে বৈঠকে বসে তা মিমাংসা করে দিবেন বলে জানান। পূজা তিনি অসুস্থ থাকার কারণে বৈঠকে বসা হয়নি। এদিকে চলাচলের পথটি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত হলে তিনি তার কারণ এবং খুলের দেওয়ার জন্য তাদের বললে। উপজেলা চেয়ারম্যানে খুলে দেবে বলে ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বৈঠকে বসার কথা জানান। চেয়ারম্যান সাহেবের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা বন্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাবা ছিলেন একজন ফকির মানুষ। তার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করা এই দরবার শরীফটি আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে আর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নিজ চোখে তা দেখা ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আপনাদের মাধ্যমে একটি মুক্তিযোদ্ধার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের অনুরোধ করছি।
এব্যাপারে দরবার শরীরের খাদেম মোঃ মোমেন মিয়া জানান, দরবার শরীফে প্রবেশের পথটি বন্ধ থাকা অধিকাংশ ভক্তবৃন্দ দরবারে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। এতে দরবার শরীফটি দিন দিন ধংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি এ অবস্থা থেকে পরিত্রান চেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এনে প্রশাসনেষর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এদিকে রাস্তা বন্ধ করা পরিবারের লোকজনে সাথে কথা বললে তারা জানায়, মাজারে বিভিন্ন ধরনের লোকজন আসে মদ গাঁজা তাই তারা রাস্তায় বন্ধ করে দিয়েছে।
এসময় অভিযুক্ত পরিবার সদস্য ওয়াজল উল্লাহ বলেন, মাজারের যারা আসে তারা মদ গাঁজা খায় আরে মদ গাঁজার গন্ধে আমার বাড়িতে থাকতে পারিনা তাছাড়া এটা কোন রাস্তা নয় আমাদের বাড়ির অংশ মাত্র, তবে হা বাড়ীর মানুষদের হাটা চলার জন্য এদিক দিয়ে একটি রাস্তা ছিল, সেটা তারাই বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ী মাঝপথ দিয়ে রাস্তা এমন প্রশ্নের তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি। বাড়ির মাঝ পথ দিয়ে রাস্তার চেয়ে এক পাশে থাকাটা ভাল নয় কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের নিজস্ব জায়গা এখান দিয়ে আমরা অন্যদেরকে চলাচলের সুযোগ দিব কেন?
এবিষয়ে ওয়াজল উল্লাহ’র অপর ভাই আজিমপুর ওয়েস্টান স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক এনামুল হক ভূঁইয়া সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনে তিনি জানান আমাদের বাপ চাচারা ৬ ভাই ও এক বোন। দাদার পত্রিক সম্পত্তি হিসেবে 65 টি শতাংশ জমির মধ্যে আমার বাবাসহ ৩ জন ১০ করে ৩০ শতাংশ ভোগ দখল করছি বাকি অংশ তারা একাই দখলে আছে। আগে তারা ভূমি অফিসের ওপর দিয়ে চলাচল করতো। বর্তমানে ভূমি অফিসের সীমানাপ্রাচীর দেওয়ার কারণে তাদের সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য তো আমরা আমাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে তাদেরকে রাস্তা দিতে পারিনা।
উত্তর বাখর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, আমি এ ব্যাপারে কয়েকবার বসেছিলাম বিষয়টির সুরাহা করার জন্য কিন্তু এনামুলরা আমার বিচার মানে না। তাদেরকে বৈঠকে ডাকলে আসে না। আমার কোন সিদ্ধান্ত মানেনা তাই বলে আমি তো জোড়পূর্বক চাপিয়ে দিতে পারিনা। এই ক্ষেত্রে আমার আর কিছুই করার নেই বলে আমি মনে করি।
Leave a Reply