মো. মোস্তফা খান, নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পৌর এলাকার প্রাণ কেন্দ্র রায়পুরা-পান্তশালা প্রধান সড়কের পাশে চলছে জমজমাট বালুর ব্যবসা। আর এই অবৈধ বালুর ব্যবসার খেসারত দিচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পথচারী ও যাত্রীসাধারণ। দিনের বেলায় বালুবাহী ট্রাক থেকে কোয়াশার মতো বালু উড়ে রাস্তা দিয়ে চোখে মুখে পড়ায় চরমভাবে স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে কোমলমতিসহ স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। বাতাসে বালু উড়ে চোখে মুখে যায় এবং এতে করে সর্দি-কাশিসহ নানা শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে দিন-রাতে শতাধিক বালুবহনকারী এসব ট্রাক বেপরোয়া চলাচল করলেও রহস্যজনক কারনে প্রশাসনের নজরে পড়ছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও অভিভাবক মহল।
সরজমিনে জানা যায়, ২৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রায়পুরা উপজেলায় ৭ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে উপজেলা সদরের সাথে চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নবাসীর যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম রায়পুরা-পান্তশালা সড়কটি। আর এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারী হাজার হাজার শিশু থেকে বৃদ্ধা স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করছে। শুধু তাই নয়, ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ-তিনগুণ বালু ট্রাকে বহন করায় নানা স্থানে পাকা সড়কের পাশ ভেঙে যাচ্ছে এবং দিনের বেলায়ও বালু ভর্তি ট্রাক আবাসিক এলাকা দিয়ে যাতায়াত করায় উপজেলা সদরে ও শ্রীরামপুর রেলগেইটে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। দীর্ঘদিন ধরে একই সড়ক দিয়ে বালুর ট্রাকগুলো যাতায়াত করাই রাস্তায় ব্যাপক ধুলি জমে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। অনেক সময় গাড়ির চাকা পিছলে দূর্ঘটনারও সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
স্থানীয়রা জানান, রায়পুরা-পান্তশালা রাস্তাটির আশে পাশে রয়েছে প্রাথমিক টেনিং সেন্টার (পিটিআই), সাবরেজিস্টার অফিস, থানা কমপ্লেক্স, পৌরসভা কার্যালয়, নরসিংদী সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, হাফিজিয়া মাদরাসা, বিনোদন পার্ক, একাধিক ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঐতিহ্যবাহী রায়পুরা পুরাতন বাজারসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। সড়কের পাশে কিংবা ব্যক্তিগত জমির ওপর এসব ব্যবসা গড়ে তোলা হলেও প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতর থেকে নেয়া হয়নি কোনো ধরনের অনুমতিপত্র। শুধুমাত্র পৌর এলাকা নয়, রায়পুরা উপজেলার বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বালু ব্যবসার কেন্দ্র। সড়কের পাশে বালু স্তুপ করে রাখায় সারাক্ষণই বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে বালু।
অভিভাবক মইন মিয়া বলেন, এখান দিয়ে চরাঞ্চলের ৬ ইউনিয়ন সহ আশপাশ জেলা উপজেলার অসংখ্য মানুষ এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এখানকার মানুষ খুবই কস্টে আছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার ছেলে পিটিআই প্রাইমারী স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। রাস্তার এ বেহাল অবস্থার কারণে ধুলোবালিতে সে এখন অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আছে। আরো অনেকের ছেলে-মেয়ে এভাবেই অসুস্থ্য হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন ও স্থাণীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির বেহাল অবস্থা, তারপর আবার প্রতিদিন অসংখ্য বালবহনকারী গাড়ী চলাচল করছে। এসব বালুবাহী ট্রাক (ইছারমাথা) বেপরোয়া চলাচলের কারনে এখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে। আমরা যারা রাস্তার পাশে দোকান নিয়ে বসে আছি ধুলোবালিতে সব মালামাল নস্ট হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ঝুকিতো আছেই। আমরা দ্রæত এর সমাধান চাই।
রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আদিল মাহমুদ বলেন, আমি থানায় নতুন এসেছি তাই উপজেলার সব কিছু এখনো দেখাশুনা বা জানা হয়নি। বালু ব্যবসায়ীদের কারণে জনসাধারণের ভোগান্তির বিষয়টি যদি সত্য হয় তাহলে ইউএনও মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকতা মোঃ মাসুদ রানা বলেন, বিভিন্নভাবে আমরা খবর পাচ্ছি যে রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় অবৈধভাবে বালু স্তুপ করে অনেকেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অনেকে বসতবাড়ি বা অবকাঠামো নির্মানের জন্য অবৈধভাবে তাদেন নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় এলোমেলো ভাবে রাখতেছে যেটি সম্পুর্ণ আইনপরিপন্থি এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ও পরিবেশের ক্ষতি করে এসব কার্যক্রম করছে তা সম্পুর্ণ বেআইনি। আমরা সবাইকে সতর্ক করতেছি এবং এর বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বালু পরিবহনের জন্য আমরা বলে দিয়েছি যে এটি রাত্রে কার্যক্রম করতে হবে। দিনের বেলায় যখন পাবলিক সমাগম থাকবে তখন বালু বা পাথর পরিবহন করা যাবে না।
এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ীদের বক্তব্য নেওয়া চেষ্ঠা করেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি না হওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply