নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই বংশের লোকজনের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধে অন্তত ৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামে সোমবার (১৫ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পূর্বঘোষণা দিয়েই দুই বংশের শতাধিক লোক এই টেঁটাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বলে জানায় স্থানীয়রা।
এই ঘটনায় আহতরা হলেন, উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের মৃত রহিছ উদ্দিনের ছেলে মোহন মিয়া (৩০), মৃত নীল মিয়ার ছেলে মিলন মিয়া (৪০) ও সুরুজ মিয়ার ছেলে ওসমান মিয়া (৩০)। তাঁদের প্রথমে ভৈরবের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে তুলাতুলি গ্রামের মুন্সীবাড়ি ও নিয়াজবাড়ি নামের দুটি বংশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর আগেও এই দুই বংশের লোকেরা তুচ্ছ ঘটনায় নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে টেঁটা, বল্লম, দা, ছুরি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। মুন্সীবাড়ি পক্ষের নেতৃত্ব মিলন মিয়া ও নিয়াজবাড়ি পক্ষের নেতৃত্ব আছেন আবদুর রউফ। সোমবারের এই টেঁটাযুদ্ধে দুই পক্ষের শতাধিক লোক আগ থেকে ঘোষণা দিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সম্প্রতি স্থানীয়ভাবে ডিস ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই বংশের মধ্যে নতুন করে বিরোধ তৈরি হয়। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে উস্কানি সূচক কথা কাটাকাটি চলছিল। গত কয়েকদিন আগে পাগলাবাড়ির এক যুবককে মারধর করেন মুন্সীবাড়ির কয়েকজন। এর জের ধরে রবিবার রাতে ওই এলাকার কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা ও ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগে থেকে ঘোষণা দেওয়া দুই বংশের শতাধিক লোক সোমবার সকাল ৮টা থেকে টেঁটা, বল্লম, দা, ছুরি নিয়ে টেঁটাযুদ্ধে লিপ্ত হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই সংঘর্ষে তিনজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে দুইজন টেঁটাবিদ্ধ ও একজন ককটেলের বিষ্ফোরণে আহত হন। স্থানীয় লোকজন আহত ওই তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী জানান, দুই পক্ষের লোকজনই মঙ্গলবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশের কাছে কথা দিয়েছিলেন, সংঘর্ষের কোন ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু সোমবার সকাল ৮টার দিকে দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই টেঁটাযুদ্ধে আহত ৩ জনই মুন্সীবাড়ির বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ ও রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা।
এব্যাপারে মুন্সীবাড়ি পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া মিলন মিয়া ও নিয়াজবাড়ি পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া আবদুর রউফের মোবাইলে বেশ কয়েকদফা ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে রায়পুরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহত ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
এব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ জানান, গত কিছুদিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আমরা বেশ কয়েকবারই দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি, তারা সংঘর্ষে না জড়ানোর কথা আমাদেরকে দিলেও সে কথা তারা কথা রাখেননি।
Leave a Reply