নিজস্ব প্রতিবেদক
রায়পুরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান জুনায়েরের খুটির জোর কোথায়? বিষয়টি জানতে চান রায়পুরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার সুবেদার (অব:) আব্দুল ওয়াহিদ। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রায়পুরা উপজেলার ১৭১ নং সাউদপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদ ভূইয়ার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের তদন্ত করতে এসে ওই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল ওয়াহিদকে কথা থামিয়ে দিতে অনেকটা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সাহেব আমি আপনাকে চিনি, আপনার দুই মেয়ে আমার আন্ডারেই চাকুরি করে’। তার এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি কমান্ডার উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তার খুটির জোড় কোথায় বলে জানতে চান।
জানা যায়, সাউদপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদ ভূইয়ার বিভিন্ন স্বেচ্চাচারিতা ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে সম্প্রতি এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পাশাপাশি নরসিংদী প্রেস ক্লাব এবং রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্তের ভার দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান জুনায়েদকে।
বৃহস্পতিবার তদন্তের দিন তদন্ত করতে এসে অভিযোগকারীদের মধ্যে কয়েক জনের, প্রধান শিক্ষকসহ তার পক্ষের কয়েকজনের বক্তব্য শুনে চলে যাওয়ার সময় ‘তদন্তে কি পেলেন আর কতটুকু করলেন’ উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এটা তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যাবে বলে তিনি জানান। এসময় সাংবাদিকরা তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন অভিযোগে অনুমতি ছাড়া সরকারী গাছ কাটার কথা উল্লেখ করা হলেও তদন্ত করতে এসে কি আপনি গাছগুলো দেখেছে? উত্তরে সে বলেন ‘দেখার কি আছে গাছের তো শুধু ডাল-পালা কাটা হয়েছে।’ না জেনে এমন কথা বলায় উপস্থিত এলাকাবাসী খুব উত্তেজিত হয়ে এলাকাবাসীর অনেকটা ক্ষোভের মুখে পড়ে কেটে ফেলা গাছগুলো দেখতে যান তিনি। এসময় উপস্থিত এলাকাবসীর পক্ষ থেকে নিজের পরিচয় দিয়ে রায়পুরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার সুবেদার (অব:) আব্দুল ওয়াহিদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে বলেন,“ আমি স্কুলের হেড মাস্টারকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম স্কুলে কোন উন্নয়ন হচ্ছে না কেন। উত্তরে হেড মাস্টার কয়, ‘ যা বরাদ্ধ আসে তার অর্ধেক তো দিয়া আইতে হয়, উন্নয়ন করমু কেমনে।’একথা শুনে শিক্ষা কর্মকর্তা ওই ডেপুটি কমান্ডার কে জিজ্ঞেস করেন, কোথায় দিয়ে আসেন। জবাবে ডেপুটি কমান্ডার বলেন সহজ কথাটা বুঝলেন না। আপনাদের দিয়ে আসতে হয়। তখন শিক্ষা কর্মকর্তা জিজ্ঞাসু সুরে বলেন,‘হেড মাস্টার একথা বলেছে। হাটে হাড়ি ভাঙ্গছে ভেবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান জুনায়েদ তাকে থামিতে দিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা সাহেব আমি আপনাকে চিনি, আপনার দুই মেয়ে আমার আন্ডারেই চাকুরি করে।’ তার কথায় যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ডেপুটি কমান্ডার সুবেদার (অব:) আব্দুল ওয়াহিদ। তিনি শিক্ষা কর্মকর্তা কাছে জানতে চান তাকে হুমকি দিলো কিনা ? এসময় উপস্থিত এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে শিক্ষা কর্মকর্তা। অবস্থা বেগতিক দেখে তার একথার জন্য ক্ষমা চান। তদন্তের বিষয়ে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করলে পড়ে তাকে যেতে দেন এলাকাবাসী। পরে ডেপুটি কমান্ডার উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ‘খুটির জোড় কোথাও’ বলে জানতে চান।
উল্লেখ্য তার এবং তার সহকারী শিক্ষা করমকর্তার দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবেদনে অবৈধভাবে এই শিক্ষা কর্মকর্তা সরকারী করনকৃত ১৪ জন প্রধান শিক্ষককে মোটা অংকের উৎকচের বিনিময়ে টাইম স্কেল প্রদান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি উপজেলাসহ জেলা ব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির আরও কিছু অভিযোগ সাংবাদিকদের হাতে আসে।
ওই ১৪ জন প্রধান শিক্ষকের মধ্যে ১৭১ নং সাউদপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদ ভূইয়াও একজন। এই ১৪ জন শিক্ষকে অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে সরকারী অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য বার বার নোটিশ প্রদান করা হলেও তারা সেই অর্থ ফেরত দিচ্ছেনা।
এব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাদেক বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দু:খজনক। আমি উপজেলায় গিয়ে সবাইকে ডাকব। আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করব।”
Leave a Reply