জাহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
তহিদুল ইসলামের ঝিনাইদহ শহরের হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি সড়কের সমবায় মার্কেটে ঝিনাইদহ স্টুডিও এন্ড ফটোস্ট্যাট নামের একটি দোকান ছিল। ২০০১ সালে বিএনপির আহুত হরতাল পালনকারিরা দোকানপাট ও জিনিসপত্র ভাংচুর করে তার।
এলাকাবাসী সূত্রে জান যায়, বাবা মৃত আফছার উদ্দিনের এক সময় ঝিনাইদহ শহরে জৌলুস ছিল। শহরের কাঞ্চনগর কলাবাগান এলাকায় তাদের পুরাতন বাড়ির কথা শহরের প্রবীণদের সবারই জানা। তহিদুলের বৈমাত্রেয় ও নিজ মায়ের পেটের ভাইয়েরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। জীবিকার তাগিতে ৫৫ পেরনো তহিদুল এখন রিকশা চালক। ৪ মেয়ের মধ্যে ২ জনের বিয়ে হয়েছে। ৩ বছর আগে প্রথমে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালাতে শুরু করে। এখন প্রতিদিন অন্যের রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছে। আরো জানা যায়, তহিদুল ২০০১ সালে ঝিনাইদহ পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। রাজনীতি ও ডানপিঠে স্বভাবের কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে বরাবর এড়িয়ে চলে। জানাগেছে তার এক ভাই এখন আমিরিকা প্রবাসী। আরেক ভাইয়ের ছেলের মালিকানায় রয়েছে শহরের অগ্নিবীণা সড়কে রনি টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবন। রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও নেতাদের অনেকেই রিকশা চালাতে দেখে তহিদুলের স্মৃতি আওড়ান। তারা জানান, এক সময় খুব ভালো ব্যবসা ছিল তহিদুলের।
তহিদুল জানান, ২০০১ সালের ১৮ জুন দেশব্যাপী হরতাল ডাকে বিএনপি। ঐ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন যে, বিরোধী দলের অধিকার আছে হরতাল ডাকার, এবং সেই হরতাল কে মানবে এবং মানবে না এটা তাদের বিষয়। তহিদুলের অপরাধ ছিল সে হরতালে সমর্থন না দিয়ে তার দোকান খোলা রেখেছিল। যুবলীগের রাজনীতি করার কারণে টার্গেট করে তার দোকানে হামলা চালিয়ে সকল জিনিসপত্র ভাংচুর করে। নিঃস্ব হয় তহিদুল। তারপর পলাতক জীবন। তহিদুল রাজনীতি করতে গিয়ে ঝিনাইদহের আলোচিত মসলেম মার্ডার, ভিপি মিঠু মার্ডার, বিএনপির পার্টি অফিস ভাংচুর সহ অসংখ্য রাজনৈতিক মামলায় আসামি হয়েছে। করেছে কারাবরণ। দল ক্ষমতায় আসলে আশা ছিল দল হয়তো তার পাশে দাঁড়াবে।
তহিদুল আরো জানান, একবার এক নেতার পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন লিখেছিলেন। তাতে সীল সহ স্বাক্ষর করে সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডিয়াম মেম্বার সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। কিন্তু সেই আবেদন প্রধান মন্ত্রীর কাছে আর পৌছানো হয়নি। রাগে ক্ষোভে এখন আর রাজনীতির সাথে নেই তহিদুল। অবিবাহিত ২ মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে রিকশা চালানোয় এখন সম্বল।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন পলাতক জীবন রাজনৈতিক হতাশার কারণে তহিদুল নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নেশা করে পাড়ায় অনেকবার মাতলামোও করেছে সে। এখন নেশা ছেড়েছে। চান বাকি দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে একটু শান্তির জীবন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় পর পর ১৪ বছর। দুর্দিনের অনেক তহিদুলের খোঁজ আসেনি ১৪ বছরেও। এসব কারণে দুর্দিনের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ঝিনাইদহের অনেক নেতাকর্মীরা দলের সভানেত্রীর কাছে দাবি করেছেন এমন ত্যাগী নেতাকর্মীদের খোঁজ করে তাদের পাশে দাঁড়াতে।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার বলেন, ঈদের পরের দিন রাতে আমি সন্ধ্যার পরে শহর থেকে বাসায় ফিরতে একটা রিকশা ডাকলাম। বাসায় পৌছে ভাড়া দিতে গিয়ে আমি চমকে উঠেছি। তহিদুল! তহিদুলের এই অবস্থা! দলের উচিৎ তহিদুল সহ এমন ত্যাগী ও দুর্দিনের কর্মী যারা আছে তাদের খোঁজ করে পাশে দাঁড়ানো। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই বার্তা দলীয় দায়িত্বশীলদের পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
Leave a Reply