লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
আজ ৬ই আগষ্ট’ শুক্রবার লাকসামের সিংহ পুরুষ হিসেবে খ্যাত মরহুম খোরশেদ আলম সুরুজের ২৭তম মৃত্যূবার্ষিকী। দক্ষিণ কুমিল্লার জননন্দিত জননেতা বৃহত্তর লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম খোরশেদ আলম সুরুজের মৃত্যুবার্ষিকীর এই উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালন করেছে।
এ উপলক্ষে সকালে উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের পক্ষ থেকে পৌর এলাকার গাজিমুড়াস্থ দৌলতগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার পাশে মরহুমের সমাধীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এছাড়াও দলীয় ও পারিবারিক ভাবে মরহুমের মাগফিরাত কামনা করে জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদে মসজিদে দোয়া মুনাজাত ও স্মৃতিচারণ করে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে আগতদের মাঝে তাবারক বিতরণ করা হয়।
এসময় দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, রক্তে মিশে যাওয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে খোরশেদ আলম সুরুজ ছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর লাকসাম (বর্তমানে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ) উপজেলার এক কিংবদন্তি মহানায়ক। যাঁর ডাকে এ অঞ্চলের মানুষ এক হয়ে মিটিং মিছিলে যোগ দিত। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে যিনি দলের হাল ধরে রেখেছিলেন আমরণ পর্যন্ত। তিনি দীর্ঘদিন লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে। খোরশেদ আলম সুরুজ গরীব অসহায় মানুষের প্রাণের স্পন্দন ছিলেন। প্রতিদিন তিনি নিজ এলাকাসহ সকল এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নিতেন। লাকসাম খাদ্য গুদামের পাশে তাঁর মালিকানাধীন লাকসাম ফ্লাওয়ার মিলের সামনে রাবার গাছ তলে বসে মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতেন তিনি।
তারা আরও বলেন, ১৯৭৫ এর পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসলে ওই সময় জিয়াউর রহমান লাকসামের নবাব বাড়ি পরিদর্শন ও চালতাতলি খাল খননে এসে খোরশেদ আলম সুরুজকে ডেকে বিএনপিতে যোগদানের প্রস্তাব দিলে তিনি সাথে সাথে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অটল থাকেন। এরপর ক্ষমতার পালাবদলে ক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ অনুরুপ ভাবে বিভিন্ন শিল্প কারখানার প্রলোভন দেখিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এনিয়ে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির শাসনামলে তিনি বহুবার মামলা হামলার শিকার হয়েও দলের সাথে বেঈমানি করেননি। ছেড়ে যাননি আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দীর্ঘবছর দল ক্ষমতায় না থাকলেও তৎকালীন দলের সভানেত্রী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খোরশেদ আলম সুরুজের আহবানে লাকসাম এসেছিলেন। লাকসাম হাই স্কুল মাঠের ওই জনসভাটি সেদিন জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছিল।
নেতাকর্মীরা বলেন, দলের জন্য তাঁর ত্যাগ ছিল অবিস্মরনীয়। মৃত্যুর কাছাকাছি এসেও এই নেতা দল থেকে কি পেলেন? এমন প্রশ্ন এখনো অনেকের মাঝে বয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রতিবছর এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে দলীয় ভাবে পুস্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা করা হয়ে থাকে।
সুরুজ ভাইয়ের ছোট ভাই শহিদ কায়সার বাবলু, তাবারক উল্ল্যাহ কায়েস, ফয়েজ উল্ল্যাহ টুটুল এবং একমাত্র ছেলে মঞ্জুরুল আলম লিটন, মেয়ে ফেরদৌসি আলম রিনা ও মুসফিকা আলম মিতা লাকসামের এই সিংহ পুরুষ নামে খ্যাত খোরশেদ আলম সুরুজের পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
তাঁরা বলেন, আগামী প্রজন্মে এমন খোরশেদ আলম সুরুজ আর জন্ম নিবেনা। যাঁর ভিতর কখনো ক্ষমতার লোভ, অর্থের লোভ কোনটাই ছিলনা। সাদামাটা জীবনে তিনি মানুষের কল্যাণে এক আত্মনিবেদিত একটি তাজাপ্রান ছিলেন। আজ তিনি নেই। তাঁর কর্মময় জীবনের স্মৃতি বহন করছে বৃহত্তর লাকসামের মানুষ।
এ বিষয়ে মরহুম খোরশেদ আলম সুরুজেরএকমাত্র ছেলে মঞ্জুরুল আলম লিটন বলেন, দীর্ঘ সময়েও বাবার জনপ্রিয়তা নুন্যতমও কমেনি। বাবাকে এখনও দক্ষিণ কুমিল্লার মানুষ হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। আর জনগণের ভালোবাসার মানুষটি আমার বাবা, তা ভাবতে গর্ববোধ হয়। বাবাকে হারিয়ে গত ২৭ বছর থেকে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে অবিরত। এক মুহুর্তের জন্যও বাবাকে ভুলতে পারিনা। বাবা আছেন হৃদয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে আপন মহিমায়।মার বাবা ছিলেন স্বপ্রতিভায় উদ্ভাসিত একজন আলোকিত মানুষ। মেধা, প্রজ্ঞায়, নীতি, আদর্শ ও সততায় তিনি ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্ব। জীববদ্দশায় বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী রাজনীতি, সমাজনীতি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, আমাদের পরিবারের কাউকে তেমনটা সময় দিতে পারতেন না। এজন্য বাবার প্রতি মাঝে-মধ্যে অভিমান হতো। কিন্তু বাবার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। তিনি ছিলেন মানুষের কাতারে, মানুষের হৃদয়ে। যার প্রতিদান এখনও আমরা পাচ্ছি। তিনি সূর্যের ন্যায় আজও যে গণ-মানুষের হৃদয়ে দীপ্তিমান তা আমাদের অভিভূত করে।
জনবান্ধব ও কর্মীবান্ধব রাজনীতিবিদ এবং উদার সমাজসেবক ও নীতিবান বিচারক হিসেবে আমার বাবা আজীবন মানুষের হৃদয়ে চিরঞ্জীব থাকবেন- এটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
আজ ৬ আগস্ট শুক্রবার ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার পরম শ্রদ্ধেয় বাবার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বৃহত্তর লাকসামের সর্বস্তরের জনগণসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমাদের চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। বাবার আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
Leave a Reply