নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর পলাশে ১২ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্রীকে রাতভর আটক রেখে ধর্ষণ করেছে সম্রাট(১৬) নামে এক বখাটে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর পরিবার আইনের আশ্রয় নেওয়ার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় ইউপি সদস্য কৌশলে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দেন। এ বিয়ে ‘বিয়ের নামে পুতুল খেলা’ বলে অভিযোগ করেছেন ধর্ষনের শিকার ছাত্রীর মা। এঘটনায় মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে আইনগত সহায়তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে জেলার আইন শৃংখলা বাহিনী। পুলিশ ইতোমধ্যে ভিকটিমের মাকে থানায় ডেকে নিয়েছেন এবং একটি মামলা রুজু করেন।
অভিযোগের জানা গেছে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটি স্থানীয় সানশাইন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। গত ১৪ তারিখ শুক্রবার রাতে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বাড়ির পাশে একটি ওরজ শরীফের অনুষ্ঠানে যায় ওই ছাত্রীটি। অনুষ্ঠানের ফাঁকে রাত ১ টার দিকে সে একটি দোকানে গেলে পলাশ উপজেলার পলাশের চর গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে সম্রাট স্থানীয় দুই যুবক নয়ন ও আকরামের মাধ্যমে ওই ছাত্রীকে নিজবাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাত্রীটির পরিবারের লোকজন সারারাত খোঁজাখুজি করে তাঁর সন্ধান পায়নি পরদিন শনিবার সকালে সম্রাটের বাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তখন ওই ছাত্রী তাঁর পরিবারকে জানায় সম্রাট তাকে রাতভর ধর্ষন করেছে। এঘটনায় তারা আইনের আশ্রয় গ্রহন করার উদ্যোগ নিলে জিনারদী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: মনিরুজ্জামান আজাদের নেতৃত্বে মাঝেরচর এলাকার মদন মিয়া ও পলাশেরচর এলাকার আওলাদের মাধ্যমে আপোষ মীমাংসার কথা বলে গত রবিবার নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোমেনের মাধ্যমে নোটারী পাবলিকে বিবাহের ঘোষণা দেন। নোটারী পাবলিকে ওই শিক্ষার্থীর বয়স গোপন করা হয়েছে। পাশাপাশি নোটারী পাবলিকটি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হলেও সংশ্লিষ্ট আইনজীবী তাতে ধর্ষনের ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারির তারিখ দিয়ে নোটারী পাবলিক সম্পন্ন করেছেন
মেয়েটির মা আসমা বেগম সম্রাটের পরিবার বিত্তশালী দাবী করে বলেন, বিচার না পেলে মেয়েকে নিয়ে আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
এদিকে যাতে করে বিচার না পায় সে কারণে ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে কাল খেপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে রসিংদীর বাসাইলে ডিজিটাল মেমোরি ডায়াগনস্টি নামে এক ডায়াগনস্টিকে নিয়ে পরীক্ষার নামে প্রতারণা করানো হয়েছে। এই পরীক্ষা জেলায় সিভিল সার্জনের অনুমতি ছাড়া বেসরকারীভাবে কোনভাবেই করানো যায়না। কিন্তু একজন চিকিৎসক কিভাবে এই পরীক্ষা করলেন তা ও ভোদগম্য নহে।
ধর্ষক সম্রাটের বাবা আব্দুল বাছেদের সাথে কথা বললে প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও অকপটে সব কিছু স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আইনি জামেলা এড়ানের জন্য ওদের বিয়েতে মত দিই। এ ব্যাপারে স্থানীন কাজী সাথে আলাপ করলে ছেলে-মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া এ মুহুর্তে তাদের বিয়ে সম্ভব নয় বলে জানান। পরে আজাদ মেম্বারের পরামর্শে কোর্ট ম্যারিজে সিন্ধান্ত নেই। আর এ কাজের দায়িত্ব দিয়ে মদন ও আওলাদকে নরসিংদী জজ কোর্টে পাঠাই। তারাই নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে কাগজ করে এনে দেয়।’
নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট খন্দকার আতাউর রহমান জানান, বয়সের প্রমাণ পত্র না থাকলে নোটারী পাবলিক বিবাহের ঘোষণা দিতে পারেননা। যদি দিয়ে থাকেন তাহলে তা আইন সিদ্ধ হয়নি।
সরকার যখন বাল্য বিবাহ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন ঠিক এমনই সময় সরকারের নিযুক্ত কতিপয় নোটারী পাবলিকরা আইন আমান্য করে বাল্য বিবাহের ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করে বাল্য বিবাহের বৈধতা দিচ্ছেন এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি তদন্ত) হুমায়ুন কবির জানান, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
Leave a Reply