নিজস্ব প্রতিবেদক
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। আদেশ আগামী রবিবার এ বিষয়ে আদেশ দিবেন আদালত। মুচলেকা ভিডিও দাখিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্ররিপ্রেক্ষিতে আদালত এ সময় মঞ্জুর করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) শুনানির ধার্যকৃত দিনে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর আদালত ভার্চ্যুয়ালি দীর্ঘ শুনানির পর আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে রবিবার আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানি এক সপ্তাহ পেছানোর আবেদন করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে জামিন শুনানি শুরু হয়ে দুপুর ২টার দিকে শুনানি শেষ হয়। সাংবাদিক রোজিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও প্রশান্ত কর্মকার, আশরাফ উল আলম।
আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘এই মামলার ৩৭৯ ধারাকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে ৩৭৯ ধারার উপাদান হচ্ছে- যেকোনো বিষয়বস্তু চুরি করার ক্ষেত্র প্রকাশ্য স্থানে, উন্মুক্ত স্থানে হতে হবে। আর প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ অনুযায়ী যদি বিশ্বাস করেন, তবে কথিত মতে ঘটনাস্থলটি হচ্ছে সচিবালয়। সুতরাং পরস্পর বিরোধপূর্ণ দুটি ধারা বিজ্ঞ আদালতের কাছে সন্দেহের উদ্রেক করে যে, প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থলটি কোথায়? আদৌ এই ঘটনা ঘটেছিল কি না?’
আইনজীবী আরও বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তাঁর মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আজ পরিস্থিতির শিকার।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের বিষয়ে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, সেকশন ৩-এর কোনো ইনগ্রিডিয়েন্টস নেই। অন্য যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা আইন অনুযায়ী জামিনযোগ্য। এ ক্ষেত্রে জামিন পাওয়াটা আমার অধিকার। তিনি বলেন, আদালত জামিনের বিষয়টি অনিষ্পন্ন রেখে মৌখিকভাবে বলেছেন, পরে এ নিয়ে শুনানি হবে।
এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের বিধান না মেনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলা করা হয়েছে। তাঁর কাছে কী নথি পাওয়া গেছে এজাহারে তার উল্লেখ নেই। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তিনি। যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা তাঁকে (রোজিনা ইসলাম) সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন।’ রোজিনার অপর আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার শুনানিতে বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে দুটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক। কেননা কোনো সাংবাদিক যদি গোপন তথ্য সংগ্রহের কারণে অফিসের সিক্রেসির আশঙ্কা থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দিতে পারেন। একইভাবে সাংবাদিককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি বরং পেনাল কোর্টে ৩৭৯ ধারায় চুরির অভিযোগে যে ধারা দেওয়া হয়েছে তা অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা আসামির জামিন প্রার্থনা করছি। মামলার যিনি বাদি তিনি একজন উপসচিব মর্যাদার। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনাস্থলে ছিলেন এ ধরনের কেউ মামলায় বাদি ছিল না। চুরির মামলা দিয়ে আসামির সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। কিছু অসৎ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিউজ করায় আসামিকে জেলে যেতে হয়েছে। আমরা আসামির জামিন মঞ্জুর করার প্রার্থনা করছি।’
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মে) রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় রিমান্ড আবেদন ও জামিন আবেদন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। বৃহস্পতিবার পররবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে গত সোমবার সোর্সের কাছ থেকে একটি চিঠি আনতে গিয়ে সচিবালয়ে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে হেনস্তার শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। পরে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলা দিয়ে পুলিশের কাছে তাকে সোপর্দ করা হয়।
ওই চিঠির বিষয়ে রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান, চিঠিতে ভ্যাকসিনের তিনটা কোম্পানির নাম লেখা ছিল। ভ্যাকসিন নিয়ে তিনটি কমিটির বিষয়ে লেখা ছিল যে কোন কমিটি সুপারিশ করেছে। তবে চিঠিটা রোজিনা খুলেও দেখেনি।
Leave a Reply