নরসিংদী প্রতিনিধি:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে ২০৪১ সালে উন্নত ওজ্ঞান নির্ভর ডিজিটাল আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সোপান দিয়েছেন। এই স্বপ্নসোপান বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল। আর দক্ষ জনবল বিনির্মানে প্রধানহাতিয়ার শিক্ষা। একটি শিক্ষিত ও দক্ষ জনবলই পারে একটি জাতিকে উন্নতির চরম শিখরেপৌঁছে দিতে। বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন কর্মমূখী শিক্ষা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেইঅর্জিত হবে জাতির পিতার দেখানো পরম আরাধ্য স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে জেলাপ্রশাসন নরসিংদী অত্যন্ত নিবিড় ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ।
নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার তরোয়া নামক এলাকার রেল লাইনঘেঁষে অবস্থিত হযরত কাবুল শাহ্ (রঃ) এঁর মাজার। মাজার ও রেল লাইনের দু’পাশে গড়েউঠেছে মৌলিক সুবিধা বঞ্চিত, ছিন্নমূল, কুসংস্কারাচ্ছন্ন দরিদ্র্য জনগোষ্ঠি। মাজারপ্রাঙ্গণে গড়ে উঠা এ জনগোষ্ঠির অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের ব্যবহার মাজার এবংতৎসংলগ্ন এলাকাকে বিষাক্ত করে তোলে।
এছাড়াও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এদরিদ্র্য জনগোষ্ঠিরশিশুরা বাল্যকাল থেকেই নানা ধরনের কিশোর অপরাধের সাথে যুক্ত হতে থাকে ফলে তাদের জীবনজড়িয়ে যেত থাকে অপরাধ চক্রের সাথে।
এ পরিস্থিতিতে মাজারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনয়নেরলক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে জেলা প্রশাসন, নরসিংদী মাজারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। কোন জনগোষ্ঠিকে পরিবর্তন করার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজনশিক্ষার। কিন্তু এখানে ছিলনা কোনশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ জনগোষ্ঠিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার স্বপ্ন পূরণ করতে ২০১১সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ ওবায়দুল আজম (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব) মাজার সংলগ্নস্থানে প্রতিষ্ঠা করেন “হযরত কাবুল শাহ্ কিন্ডার গার্টেন” স্কুল। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়জরাজীর্ণ টিনশেড কিন্ডার গার্টেন স্কুলটি বোর্ড অনুমোদিত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত“হযরত কাবুল শাহ্ নরসিংদী কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল” এ উন্নীত হয়। এছাড়াওশিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই, স্কুল ড্রেস প্রদানসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে যুগোপযোগীভূমিকা পালন করেন। অসচ্ছল, দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এস্কুলের পরিবেশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের সূচনা লগ্নে উক্তস্কুলের সভাপতি ও জেলাপ্রশাসক এর দক্ষ নেতৃত্বে ৫তলা বিশিষ্টআধুনিক দ্বিতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। জেলার বিশিষ্টদানশীল ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহায়তায়২০১৬ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
২০১৭ শিক্ষাবর্ষ হতে এ আধুনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমপরিচালিত হচ্ছে।১১ মার্চ ২০১৮ তারিখ সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জেলা প্রশাসক ও জেলাম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নরসিংদী জেলায় যোগদানের মধ্যদিয়ে হযরত কাবুল শাহ্ নরসিংদী কালেক্টরেট পাবলিক স্কুলসোনালীযুগে প্রবেশ করে। যোগদানের পরেই উক্ত স্কুলের সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক তাঁরনিজস্ব চিন্তাচেতনা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে স্কুলের উন্নয়নে নতুন মাত্রাযোগ করে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষারমান উন্নয়ন, সাংস্কৃতিকচর্চা, মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস প্রদান, শিক্ষাউপকরণ বিতরণ, বার্ষিক বনভোজন, সাংস্কৃতিক চর্চা ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতারআয়োজনসহ নানা উদ্যোগ সর্বমহলে সমাদৃত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীদেরশ্রেনীকক্ষের সংকট নিরসনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকর্তৃক ৫তলা বিশিষ্ট ১তলা ভবননির্মাণে ৭০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। বিগত ২৩মে শনিবার নবনির্মিত ভবনটির চাবি বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেস্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয় এবং শুভ উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনের সময় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলাম,নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষপ্রফেসরগোলাম মোস্তাফা মিয়া, সাবেক অধ্যক্ষপ্রফেসরমোহাম্মদ আলী, নরসিংদী ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা, নরসিংদীপ্রেস ক্লাবের সভাপতি মাখন দাস ও সাধারন সম্পাদক মাজারুল পারভেছ মন্টিসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নবনির্মিত ভবনের ফলেশ্রেণিকক্ষের সমস্যার সমাধান হয়েছে বিধায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সুধী সমাজ ওএলাকাবাসীর মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।হযরত কাবুল শাহ্ নরসিংদী কালেক্টরেট পাবলিক স্কুলটিপ্রতিষ্ঠালগ্ন হতে নরসিংদী জেলায় বিভিন্ন সময়ে কর্মরত জেলা প্রশাসকবৃন্দের মেধা,মনন ও পরীশ্রমের মাধ্যমে নরসিংদী জেলার লাইট হাউস হিসেবে আলো দিয়ে যাচ্ছে। কিন্ডারগার্টেন হিসেবে যাত্রা শুরু করা স্কুলটি সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের তীর্থস্থানেপরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী ও সুধী সমাজের দৃঢ় বিশ্বাস জেলা প্রশাসনের হাত ধরে স্কুলটিপাড়ি দিবে আরো বহুদূর।
জোনাকি টিভি/এমএমখান/২৮-০৫-২০ইং)
Leave a Reply