ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ব্যাংক ও বিভিন্ন দপ্তরে ৬ বছর ধরে ধন্যা দিয়ে আব্দুল হাইয়ের কষ্টার্জিত সেই টাকা আজও মেলেনি। বাধ্য হয়ে গত বছর ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করে এর কোন প্রতিকার পায়নি প্রবাস ফেরত আব্দুল হাই। এর মধ্যে তদন্ত শেষ করে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে এখনও মামলার শুনানি শুরু হয়নি।
আব্দুল হাই (৪০) নিজের জমি বিক্রি করে জীবিকার তাগিদে বিদেশ গিয়েছিলেন। সেখানে তার ৭ বছরের কষ্টার্জিত টাকা দেশে নিজ নামের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়েছে। ৭ বছরের এই জমানো টাকা দিয়ে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করবেন।পরিবর্তন ঘটাবেন ডাগ্যরেখার। কিন্তু তার সব আশা গুড়েবালি। দেশে ফিরে ব্যাংকে জমানো টাকা পাননি আব্দুল হাই। ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানোন হয়েছে, স্বাক্ষর জাল করে আব্দুল হাইয়ের এক ভাই ওই হিসাব থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েগেছে।
ওই টাকা পেতে আব্দুল হাই গত ৬ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ নানা দপ্তরে ধন্যা দিয়েছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার মেলেনি।
বর্তমানে দিনমজুরি করে চলছে সংসার তার। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে। নিজের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত না পেয়ে গত বছর ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেন আব্দুল হাই। এরই মধ্যে তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু আদালতে আজও মামলার শুনানি শুরু হয়নি।
আব্দুল হাই ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ধান্যহাড়িয়া গ্রামের মোসলেম আলীর ছেলে। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ।
আব্দুল হাই জানান, ২০০৮ সালে নিজের ২৭ শতক জমি বিক্রি করে সৌদি আরব যান তিনি। প্রবাসে যাবার আগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চৌগাছা শাখায় নিজের নামে একটি হিসাব খোলেন। তবে ব্যাংক থেকে কোন চেক বই উত্তোলন করেননি তিনি। বিদেশ থেকে তিনি এই ব্যাংক হিসাবে ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৫ মে এর মধ্যে ৭ দফায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা পাঠান। ২০১৫ সালে তিনি দেশে ফিরে ব্যাংক থেকে চেক বই উত্তোলন করেন। সেই চেক জমা দিলে ব্যাংক বর্তৃপক্ষ জানান তাঁর একাউন্টে কোন টাকা নেই।
আব্দুল হাই ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য উত্তোলন করে দেখতে পান ২০১২ সালের ১৪ আগষ্ট থেকে ২০১৩ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত ৮টি চেকের মাধ্যমে ৪ লক্ষ ৩৬৮ টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আব্দুল হাই আরও জানান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে তার এক ভাই জালিয়াতি করে চেক বই উত্তোলন করে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে সমঝোতা করার কথা বলে দায়িত্ব শেষ করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। টাকা ফেরতের জন্য তিনি ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখা পর্যন্ত গেছেন। লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। অবশেষে তিনি ২০২০ সালে যশোর আদালতে একটি মামলা করেন।
মামলায় ইসলামী ব্যাংক যশোরের চৌগাছা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম ও সাবেক জেষ্ঠ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান এ দু’জনকে আসামি করা হয়।
ওই শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, অপরাধ করেছেন তার ভাই। আব্দুল হাইয়ের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চোখে ধরা পড়েনি। তবে তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোর কার্যালয়ের এসআই গৌতম কুমার বলেন, তিনি আদালতে নির্দেশ পেয়ে মামলাটির তদন্ত শেষ করেছেন। আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী রবিউল ইসলাম জানান, তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে, এটা তিনি শুনেছেন। তবে করোনার কারণে বিচারকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মামলাটির তারিখ এখনও ধার্য হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
Leave a Reply