মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী:
কোরানা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন। গৃহে বন্দি নানা পেশার মানুষজন কর্মহীন হয়ে পেড়েছে । এতে দেখা দিয়েছে অভাব অনোটন এ অবস্থায় নিম্মবিত্ত মানুষরা বিভিন্ন জায়গায় থেকে সাহায্য চেয়ে নিচ্ছেন। এদিকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় পকেট প্রায় শূণ্য হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
অপরদিকে লাগাম ছাড়া হয়ে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।যা ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সংসারে অভাব দেখা দিলেও বলতে পারছেনা কাউকে, সইতেও পারেছানা, এতে অসহায় হয়ে চার দেয়ালে বন্দি হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্তদের কান্না।
নরসিংদী জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে যখন মানুষ ঘরবন্ধি হয়ে পড়েছে, রাস্তা-ঘাট জনশূন্য প্রায়। সরকারী অফিস আদালত বন্ধ। থমকে দাড়িয়েছে মানুষের জিবন যাত্রা আয় রোজগার। এই সময় সরকারী বে-সরকারী সংস্থা ও বিত্তবানরা শ্রমজিবী মানুষের মাঝে ত্রান দিলেও চার দেয়ালে বন্ধি হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর কান্না। তাদের অনেকের সংসার অচল হয়ে পড়লেও তারা মুখ ফুটে কাউকে বলতেও পারছেনা, তাদের নিয়ে কেউ ভাবছেও না। সরকার মধ্যবিত্তদের বাড়ী বাড়ী ত্রান দেয়ার কথা বললেও এখন প্রর্যন্ত কেউ ত্রান নিয়ে তাদের বাড়ীতে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে লকডাউনের ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধের অজুহাতে দিন দিন বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম।প্রতিটি দ্রব্যের দাম কয়েক দফা বেড়ে তা ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে চাল কেজি প্রতি ১৪/১৫ টাকা, মোটা ডাল কেজি প্রতি ৩৫ টাকা, খেসারি প্রতি কেজি ৩০/৩৫ টাকা, সোয়াবিন তেল ১০/১৫ টাকা, পেয়াজ কেজি প্রতি ১৭/২০ টাকা, রসুন কেজি প্রতি ৩৫/৪০ টাকা, আদা কেজি প্রতি ৫০/৬০ টাকা, ছোলা বুট কেজি প্রতি ১০/১২ টাকা, কেজি প্রতি ৮/১০ টাকা চিনিসহ প্রায় প্রতিটি দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর দাম বৃদ্ধিতে সংসার চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের। কয়েকজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকের ঘরে এখন খাবার নাই, পকেটে টাকাও নাই। ধারদেনা করে কিছু টাকার জোগার করলেও প্রতিটি দ্রব্যের দাম বাড়ায় তা ক্রয় ক্ষমতা বাহিরে চলে গেছে। ত্রান যারা দিচ্ছে অধিকাংশ ত্রান দাতারা ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তারা ত্রান নিতে যেতে পারছেনা লোক লজ্জার ভয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার কৃষক, সল্প পুঁজির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ছোটখান চাকুরিজীবি। তাদের অনেকে কারো দোকানে চাকুরি করে, অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠা বন্ধের সাথে সাথে তাদের আয় রোজগারও বন্ধ হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক নরসিংদীতে কাপড়ের দোকানের এক সেলসম্যান বলেন, হাতে টাকা না থাকায় পরিবারের চাহিদা পুরোনের জন্য মালিকের নিকট অগ্রিম টাকা চেয়েও পায়নি। এখন কি হবে, সামনে রমজান মাস কি ভাবে চলবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। তাদের পরিবার এখন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। একই কথা বলেন কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তারা বলেন, মানুষ কাঁচা-বাজারে গেলেও অনান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ রয়েছে, হাতে যা নগদ অর্থ ছিল তা সবেই শেষ। দোকনের মাল রয়েছে কিন্তু টাকা নাই, কিভাবে সংসার চলবে।
শফিক নামে এক বেসরকারী চাকুরীজীবি বলেন, ভাই আমি ছোট-খাট চাকুরী করি। এতে আমাদের তিনজনের কোন রকমে চলে যায়। সঞ্চয় বলতে কিছুই নাই। করোনা অফিস-আদালত বন্ধ। এপ্রিল মাসে বেতনও পাইনি। ঘরে চাল নেই, ডাল নেই, বাচ্ছার দুধ নেই। এক বন্ধুর কাছ থেকে ধারদেনা করে বাজারে এসেছি গত মাসে যে চাল ৩২ টাকা কেজি কিনেছি তা আজ ৪৬ টাকা কেজি ধরে কিনতে হয়েছে। বাচ্চার দুধের দামও আগের তুলনায় ৩০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় আমরা কোথায় যাব, কি খাব, মরন ছাড়াতো আমাদের আর কোন উপায় নেই।
নরসিংদী বাতিঘরের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মো: মাজহারুল পারভেজ মন্টি বলেন, মধ্যবিত্তরা চলতেও পারেনা বলতেও পারেনা, এই অবস্থায় মধ্যবিত্তদের পাশে দাড়ানো একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর পাশে এখনই না দাড়াঁলে তাদের অনেক সমস্যা হবে। এই জন্য তিনি এই মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোকে বাঁচাবার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
Leave a Reply