নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি নথি চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলায় পাঁচ হাজার টাকার বেলবন্ডের বিনিময়ে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিম বাকি বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
শর্তানুযায়ী আদালতে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে।
এ মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন । পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ হলে আজকেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
এর আগে বৃহস্পতিবার পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিন শুনানি হয়। ওইদিন জামিন না দিয়ে নথি পর্যালোচনা করে আদেশ দেওয়ার কথা জানান আদালত। শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
এরপর রোজিনার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর প্রিজনভ্যানে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়।
সোমবার রোজিনার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে না পারলেও মঙ্গলবার আদালত থেকে বের হওয়ার সময় রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, আমার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’
রোজিনা ইসলামকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে সেই ১৭ মে রাতেই বিক্ষোভ করতে শুরু করেন সাংবাদিকরা। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। রোজিনা ইসলামের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মত দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ওই সাংবাদিক (রোজিনা ইসলাম) টিকা আমদানি সংক্রান্ত এমন কিছু নথি সরিয়েছিলেন, যেগুলো প্রকাশ হলে দেশের ক্ষতি হতে পারত।
রোজিনা ইসলামেকে গ্রেফতারের পরদিন ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকরা তা বর্জন করেন।
রোজিনা ইসলামকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অর্থাৎ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টটি প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো একটি আইন।
এদিকে ১৭ মে রোজিনা ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওযার পর রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখা যায়- এক নারী তার গলা চেপে ধরেছেন।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা, তাকে গ্রেফতার ও তার জামিন হবে কি হবে না, সেটাই গত কয়েকদিন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
Leave a Reply