নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ ১৪ জুলাই বড়িবাড়ির ট্র্যাজিটির দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর পাঁড় ঘেষা বড়িবাড়ি গ্রামে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। সেই দিনের সেই হত্যাযজ্ঞ বিষয়টি আজও নাড়া দেয় বেলাবসহ নরসিংদী বাসীকে। প্রতিবছর ১৪ জুলাই এলে ৭১’র রক্তস্নাত বড়িবাড়িতে স্বজন হারানোর কান্নায় ভারী হয়ে উঠে চারপাশ।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এই দিনে বড়িবাড়ি এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ৫৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। এসময় জ্বালিয়ে বড়িবাড়ি গ্রামের অসংখ্য বাড়িঘর। শুধু তাই নয় ওইদিনের সেই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরাস্ত হয়ে কয়েকজন হত্যার শিকার ও বাকীরা অন্যত্র সরে গেলে পাক হানাদার বাহিনী গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীকে ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিশু, বৃদ্ধ ও যুবকসহ কেউই । সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞের পর হানাদার বাহিনী চলে গেলে পুনরায় ফিরে আসার ভয়ে এক কবরে ৪/৫ জনকে এক সাথে সমাহিত করেন গ্রামবাসী।
বড়িবাড়ির প্রবীণ গ্রামবাসী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ওইদিন ৩ নং সেক্টরের অধীন প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার আবুল বাশারের নেতৃত্বে ২৫/২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা বড়িবাড়ি গ্রামে অবস্থান নেয়। ১৪ জুলাই সকালে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের সালুয়া গ্রাম থেকে পাকবাহিনীর একটি দল নৌকা ও লঞ্চ যোগে বেলাব’র দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এসময় বড়িবাড়িতে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের এগিয়ে আসা নৌকাটিকে সন্দেহ হলে তীরে আসার জন্য নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশে নৌকা থেকে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপর এলোপাথারী গুলি ছুড়তে থাকে। অন্যদিকে লঞ্চে থাকা পাক হানাদার বাহিনীর বিশাল আরেকটি দল কৌশলে তীরে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে এবং এলোপাথারী গুলি বর্ষণ করতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর শতাধিক সদস্য’র সাথে যুদ্ধে পেরে উঠতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে থাকেন। কিন্তু এর আগেই পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হয় মুক্তিযোদ্ধা প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার আবুল বাশার বীর প্রতিক, আঃ বারি, নুরুল হক, মমতাজ উদ্দীন ও সোহরাব হোসেন। পরে পাকবাহিনী বড়িবাড়ি গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করে জ্বালিয়ে দেয় বাড়িঘর।
বড়িবাড়ি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খলিলউল্লাহ পাঠান সেইদিনের সেই যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিনের যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৫৫ জন গ্রামবাসী শহীদ হয়েছিলেন। বড়িবাড়ির যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে সেখানে একটি শহীদ মিনার তৈরী করা হলেও আমাদের দাবী এই যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৬০ জনের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতি ফলক যাতে সরকারীভাবে নির্মাণ করা হয়।
এব্যাপারে বেলাব উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ভূইয়া জাহাঙ্গীর বলেন, যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৬০ জনের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতি ফলক এর বিষয়টি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) মাসিক সমন্বয় সভায় প্রস্তাব আকারে প্রেশ করবো এবং বাস্তবায়নের চেষ্ঠা করবো।
Leave a Reply