নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর মনোহরদীতে এক কলেজ ছাত্রকে তাঁর বন্ধুরা মোবাইলফোনে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। সোমবার (২৬ জুলাই) রাতে উপজেলার একদুয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) এ ঘটনায় নিহত কলেজ ছাত্রের বাবা থানায় হত্যা মামলা করেন।
নিহত কলেজছাত্রের নাম মো: শ্রাবণ মিয়া (২২)। সে মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের কামারআলগী গ্রামের মো. শাহজাহানের ছেলে এবং শিবপুরের আবদুল মান্নান ভূঁইয়া কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
এ ঘটনায় শ্রাবণের বন্ধু সাখাওয়াত হোসেন আহত হয়েছেন। পুলিশ মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন মনোহরদীর একদুয়ারিয়ার হৃদয় মিয়া ও মৃদুল মিয়া।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, একদল কিশোর ও তরুণ ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে ২৫ জুলাই শিবপুরের লাখপুর বাজার এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকাভ্রমণে যান। ওই সময় কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালান। ওই অভিযানে নৌকাটিতে থাকা ৭১ জন কিশোর ও তরুণকে আটক করা হয়। পরে অপ্রাপ্তবয়স্ক ৩১ জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ৪০ জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে শ্রাবণ ও সাখাওয়াত নামে তার অপর বন্ধু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসায় তাঁদের অর্থদণ্ড দিতে হয়নি। এ অর্থদন্ডকে ইস্যু করে হৃদয় ও মৃদুলের সঙ্গে শ্রাবণ ও সাখাওয়াতের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর জের ধরেই সোমবার রাতে শ্রাবণকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে এক বন্ধুর ফোন পাওয়ার পর শ্রাবণ ও সাখাওয়াত একটি মোটরসাইকেলে একদুয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে যান। সেখানে হৃদয়, মৃদুলসহ সাতজনের সঙ্গে শ্রাবণ ও সাখাওয়াতের কথা–কাটাকাটি হয়। কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে হৃদয়, মৃদুলসহ অন্যরা বাঁশের লাঠি দিয়ে তাঁদের পেটাতে শুরু করেন। এ সময় শ্রাবণ মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে চলে যাওয়ার সময় তড়িঘড়িতে মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাঁকে উপর্যুপরি মারধর করে ফেলে রেখে চলে যায় ওই সাতজন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয়রা শ্রাবণ ও সাখাওয়াতকে উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্রাবণকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মনোহরদী থানার পুলিশ শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় এবং শ্রাবণের লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
হামলায় আহত সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ফোন পেয়ে শ্রাবণের মোটরসাইকেলে করে আমরা দুজন একদুয়ারিয়াতে গেলে তাদের জরিমানা দিতে হয়েছে অথচ আমাদের দিতে হয়নি, এ কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত চাইছিল তারা। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কথা–কাটাকাটি হয়। পরে আমাদের দুজনকেই উপর্যুপরি মারধর করা হয়। ঘটনার সময় আমি কোন রকমে দৌড়ে পালিয়ে আসতে পারায় এখনো বেঁচে আছি।’
এ বিষয়ে নিহত শ্রাবণের বাবা ও মামলার বাদী মো: শাহজাহান বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় আমার ছেলেকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলল। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, এই ঘটনায় নিহত শ্রাবণের বাবা মো: শাহজাহান বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪–৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply