1. [email protected] : admi2019 :
  2. [email protected] : খুলনা বিভাগ : খুলনা বিভাগ
  3. [email protected] : News : Badol Badol
  4. [email protected] : Mostafa Khan : Mostafa Khan
  5. [email protected] : mahin : mahin khan
বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৯:৫৪ অপরাহ্ন

বেদে সম্প্রদায়ের আকুতি: `বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’

শরীফ ইকবাল রাসেল
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১
  • ১৮২ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নরসিংদী জেলার শিল্পনগরী ঘোড়াশাল। এই ঘোড়াশাল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই যাদের শুরুটা জড়িয়ে আছে তারা হলো ঘোড়াশালের বেদে সম্প্রদায়। শুরুটা হাতেগনা কয়েকটি পরিবার হলেও এখন তাদের পরিবারের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। সব মিলিয়ে তাদের সদস্য সদস্য সংখ্যা প্রায় হাজারের মতো।

ঘোড়াশাল পৌর এলাকায় শুরু থেকে এখনো তাদের বসবাস। সাপ খেলা দেখানো, কবিরাজি করা, তাবিজ-কবজ বিক্রি করেই চলে তাদের জীবন সংসার। দিন দিন তাদের এ ধরনের কাজের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় পরিবারের পুরুষদের মধ্যে অনেকেই এখন মাছ ধরার পেশায় ধাবিত হয়। আবার অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে দৈনিক ভিত্তিতে অন্যান্য কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন শুরু থেকেই ঘোড়াশাল এলাকার মরহুম ডা: নজরুল ইসলামের জায়গায় বসবাস করে আসছেন। বেদে সম্প্রদায়ের পরিবার বৃদ্ধি পাওয়fয় তাদের কিছু লোকজন ঘোড়াশালের শীতলক্ষা নদীতে নৌকায় ভাসমান আবার কেউ নদী পাড়ে ঝুপরি ঘরে বসবাস করে আসছে। আবার সম্প্রতি তাদের কয়েকজন কিছু অর্থ খরচ করে পাশেই একটা জায়গা ক্রয় করে তাতে ঘর তৈরী করে সম্মিলিতভাবে বসবাস শুরু করে।

এই ঝুপরি ঘরে বসবাস করেন ইয়াজউদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ। তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন, শত বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন। এখানে ভোটারও হয়েছেন। দেশের প্রচলিত সকল নির্বাচনে ভোটও দিচ্ছেন। তাতে প্রতিনিধিও নির্বাচিত হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মীর জীবন মান পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু আমাদের এই সম্প্রদায়ের কোন পরিবর্তন হয়নি। ‘থাকি পানির উপর, পানি বাড়লে ঘরে পানি উঠলে ভাড়া থাকতে হয়। নাই বিদ্যুৎ, নাই খাবার পানিও। ৫ ছেলে ৪ মেয়ে নিয়ে থাকতে হয় বহু কষ্টে।’

এই বেদে পরিবারের আরেকজন খোরশেদ আলম। তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে এখানে বসবাস করেন। তিনি জানান, আগে বসবাস ছিলো স্থলে। পরে লোকজন তাদের জায়গায় মার্কেট করলে এখন নদীর উপর মাচা করে থাকতে হচ্ছে। এখান থেকে পর পর দুটি বাঁচ্চা পানিতে পরে মারা গেছে। এখানে নলকুপ নাই, গোসল খানার ব্যবস্থা নাই, বিদ্যুতের সমস্যা। এছাড়া তাদের বসবাসের স্থানে পৌরসভার ময়লার ভাগার, এই অবস্থায় কি মানুষ বসবাস করতে পারে?

সমাজ সেবা অধিদপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপমতে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ ২৯ হাজার ১৩৫ জন অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং ৭৫ হাজার ৭০২ জন বেদে জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাই তাদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬৪ জেলায় ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় ঘোড়াশাল বেদে সম্প্রদায়ের একটাই দাবী। একজন সুস্থ্য মানুষ বেচে তাকার জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন সেই পরিবেশের জন্য সকলে একটি বসবাসের জন্য কোন এক সরকারী জায়গা বরাদ্ধের মাধ্যমে বসবাসের ব্যবস্থা করা। যেখানে থাকবে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা।

সরেজমিনে এই বেদে পল্লীতে বসবাসকারী শ্যামল মিয়া, হালিমা খাতুন, জোসনা বেগম ও রিনা বেগমের সাথে কথা হয়। জানার চেষ্টা করা হয় তাদের জীবন ও সংসারের কথা।

এসময় তারা জানায়, যুগ যুগ ধরে উত্তরাধীকার সূত্রে এখানে বসবাস। তাদের অনেকেই আদিপেশা সাপ খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এখন যার যার মতো পছন্দ অনুযায়ী পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। এভাবেই চলছে তাদের সংসার। বিয়ে-শাদী তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে হলেও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য তাদের জন্য নেই নির্দিষ্ট উপাসনালয় বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালয়ও। ফলে তাদের মধ্যে ছোট্ট এক মেয়ে দুরে এক মক্তবে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় একটি পা বিকল হয়ে গেলেও চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। এখন মেয়েটি ধুকে ধুকে কষ্ট করছে। এছাড়া বঞ্চিত হতে হচ্ছে ধর্মীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকেও। সামাজিক কৃষ্টি কালচার হিসেবে সাধারণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে না পারায় মানুষিকভাবেও কষ্ট পায়।

তাদের জীবন মান বিষয়ে পলাশ থানা সেন্ট্রাল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শহিদুল হক সুমন বলেন, একজন ব্যক্তি যদি ভোটাধিকার প্রাপ্ত হন। তখন তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। বেদে সম্প্রদায় এসব থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা জাতির মূল শ্রোতধারা থেকে পিছিয়ে আছে। তাই তাদের মূল্য শ্রোতধারায় নিয়ে আসতে হলে তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো পুরণ করতে হবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নরসিংদীর উপ পরিচালক মাসুদুর রহমান তাপস জানান, নরসিংদীতে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য কিছু সংখ্যাক বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। আবার গুটি কয়েকজন শিক্ষা ভাতাও পাচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের সকলকে ধাপে এর আওতায় আনার চেষ্টা করবো।

ঘোড়াশাল পৌর মেয়র মো: শরীফুল হক জানান, ঘোড়াশাল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বেদে সম্প্রদায়ের একটা ভূমিকা রয়েছে। তারা সত্যিকার অর্থে সমাজের সবথেকে অসহায় শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করছে। মেয়র হওয়ার পর সরকারী সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা পৌরসভার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দেওয়ার আশ্বাস দেন। বেদে সম্প্রদায়েল জন্য একটি স্থানে বসবাসের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয় চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান পৌরমেয়র।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..