নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদী সরকারী কলেজ (ন.স.ক) ক্যাম্পাসে ঢুকলে মাঝে মধ্যে বাতাসের সাথে ভেসে নাকে এসে লাগে রক্তের সেই উদ্ভট গন্ধ। ছাত্র সংসদের দেয়ালে ও মেঝে থেকে এখনও মুছে যায়নি জিএস রনির রক্তের সেই ছাপ। জনপ্রিয় এই ছাত্রনেতার হত্যার ইতোমধ্যে ১০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আজও তার হত্যার বিচার পায়নি স্বজনরা। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে।
নরসিংদী সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত এই প্রয়াত জিএস রনি হত্যা মামলার বিচার কার্য আজও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে মামলার আসামীরা। আর এদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে কেন্দ্রিয় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক প্রভাবশালী নেতা।
জানা যায়, নরসিংদী সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদে ২০১০ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হয় বিল্লাল হোসেন রনি। জিএস নির্বাচিত হওয়ার পরে রনি জনপ্রিয়তা দিন দিন আরও বাড়তে থাকে। তার জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন ঈর্ষাণ্বিত হয়ে নিজ দলেরই স্বার্থান্বেসী নেতা কলেজে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ তার কর্মীবাহিনী দিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন জিএস রনিকে কলেজের ছাত্র সংসদের ভিতরই কুপিয়ে হত্যা করেছি খুনিরা। রনি রক্তে ভেসে ছাত্র সংসদের দেওয়া ও মেঝে। এঘটনায় রনির বড় ভাই আবুল ফজল বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা ১৬ জনের নাম উল্লেখপূর্বক আসামী করা হয়।
বাদীর আবেদনটি এজাহারভুক্ত হওয়ার মামলার দায়িত্বভার এসআই কাসিফ সানোয়ারের উপর ন্যাস্ত হয়। তদন্ত কর্মকর্তা মামলা দীর্ঘ তদন্ত এবং মামলার স্বাক্ষী ও আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনেকদূর এগুলেও তদন্ত কাজে উপরস্থ কর্মকর্তা হস্তক্ষেপ করলে এতে মামলার তদন্তে বেঘাত ঘটতে পারে বলে মনে করেন। তাই তিনি মামলা তদন্ত ভার সিআইডি’র উপর ন্যাস্ত করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন। বাদীর আবেদন সাপেক্ষে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হয়। আদালতের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে ২০১১ সালের ৪ জুলাই সিআইডি ‘র পুলিশ পরিদর্শক গৌর চন্দ্র মজুমদার মামলার দায়িত্ব গ্রহন করে থানা থেকে সকল কাগজপত্র বুঝে নেন।
তিনি দায়িত্ব পাওয়া পর মামলার তদন্ত কাজের গতির সঞ্চার হয়। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। মামলার এজারভুক্ত ও এজাহার বর্হিভূত বেশ কয়েকজন আসামী হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ পূর্বক অন্তর্বতীকালীন জামিন লাভ করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশের ও সিআইডির তদন্তকালীন সময়ে বার বার হাইকোর্টের জামিনপ্রাপ্তরা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ অবস্থায় তদন্ত কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র মজুমদার আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত বাংলা লিমন, মুন্না, মিথুন, সিয়াম, বোমা রতন, সৃজন ও রাজনের ৪ দিন করে পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে।তিনি তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অপর আসামী মহসীন হুসাইন বিদ্যুৎকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে তিনি সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এদিকে হাইকোর্টে আত্মসমর্পণকারী এজাহারভুক্ত আসামী আরিফ জামিন শর্ত ভঙ্গ করে নিম্ন আদালতে হাজির না হওয়ায় তিনি তাকে গ্রেফতার পূর্বক রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে রনি হত্যায় নিজেসহ অন্য আসামীদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে আদালতে প্রেরণ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
এদিকে দেখতে দেখতে বেশ সময় গত হলে কোন এক অদৃশ্য কারণে তদন্ত কাজে ভাটা পরে। আসামীরা আদালতের মাধ্যমে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে জেল থেকে মুক্ত হয়।
অন্যদিকে কয়েক জন আসামী প্রথম থেকেই গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দেন। পালিয়ে থেকেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তারা পলাতক অবস্থায় যেখানে থেকেছে সেখানে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কথা শুনা যায়। যার উদাহরণ হিসাবে রনি হত্যা মামলার আনন্দের কথা বলা যায়। মাস কয়েক পূর্বে ইয়াবাসহ রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বর্তমানে সে নরসিংদীতে ফিরে এসেছে। নরসিংদীতে ফিরেই সে রাজনীতিতে পূনরায় সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা যায়। আর তাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের এই প্রভাবশালী নেতা তার গ্রামের বাড়ী নরসিংদীর মনোহরদী আসলেই তার আনন্দকে দেখে যায় বলে জানা যায়।
এদিকে এই নেতার নাম ভাঙ্গি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জেলা থেকে শুরু করে থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিট কমিটিগুলোতে পদ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে পদ বানিজ্যের গুঞ্জন উঠেছে জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এব্যাপারে আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনে তিনি জানান, ‘রনি হত্যার সাথে জড়িত আমি কাউকে চিনিনা। তাছাড়া আমি মনে করি আমি রনির পরিবারেরই একজন।’
Leave a Reply