নরসিংদীতে জাল দলিল সৃজন করে ভূমি খেকো অলিউল্লা নামে এক ইউপি সদস্য জমি অধিগ্রহনের বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন আটপাইকা মৌজায় ও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর জমির প্রকৃত বৈধ মালিক হিসেবে জেলা প্রশাসক’র বরাবর লিখিত অভিযোগটি দাখিল করেন সেলিম মিয়া। মহিষাশুড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অলিউল্লা এঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগে বলা হয়।
সরজমিনে ঘটনাস্থল আটপাইকা গ্রামে গেলে ভুক্তভোগী সেলিম মিয়া জানান, ‘আটপাইকা মৌজায় এস.এ ও আর.এস- ২০২ খতিয়ানে এস.এ- ৪২১নং আর.এস- ৬৭০নং দাগের সম্পত্তিতে আমার দাদা ছমির উদ্দিন জোত স্বত্বে মালিক থেকে এক ছেলে তাইজ উদ্দিন ও দুই মেয়ে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। ছমির উদ্দিনের মৃত্যূর পর তার ছেলে তাইজ উদ্দিন পৈত্রিক সূত্রে মালিক দখলকার থেকে মৃত্যুবরণ করলে সে মোতাবেক তিনি পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা প্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখল করে আসছিলেন। কিছুদিন পূর্বে জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হলে সেখানে উপস্থিত হয়ে কর্মরত শ্রমিকদের বাধা দিলে শ্রমিকরা এ জমি সরকার অধিগ্রহন করে নিয়েছেন বলে তাকে জানায়। এ ব্যাপারে ডিসি অফিসে যোগাযোগ করার কথা বলেন তারা। পরে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ডিসি অফিসের এল.এ শাখায় যোগাযোগ করলে জানতে পারেন সরকার এ জমি অধিগ্রহন করে নিয়েছে। ইতোমধ্যে এর বিলও প্রদান করা হয়েছে এবং সেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এল.এ শাখার তথ্য মতে বিল উত্তোলনকারী নরসিংদী জেলার মাধবদী থানাধীন বালুচর গ্রামের আ: রহমানের ছেলে মহিষাশুড়া ইউপি সদস্য অলিউল্লা।
এল. এ শাখার জমির মালিকানা জানতে চাইলে সার্ভেয়ার তাকে জানান, ১০৪৮৫/৭৩ দলিলে ছমির উদ্দিন চাঁন মিয়াকে রেজিষ্ট্রি করে দেন। বিল উত্তোলনকারী অলিউল্লা উক্ত চাঁন মিয়ার নিকট হতে বিল এওয়াজ হেবা দলিল মূলে এর মালিকানা দেখিয়ে বিলের চেক গ্রহন করেন। এ তথ্য পেয়ে সেলিম মিয়া নরসিংদী মহাফেজ খানা হতে ১০৪৮৫/৭৩ দলিলের অবিকল নকল সংগ্রহ করেন। যা নরসিংদী শহরের সড়ক ব্রাহ্মন্দী মৌজাস্থ। আর এ দলিলের গ্রহিতা আলী আকবর ভূইয়া, পিতা- দানিছ ভূইয়া। দাতা – শ্রী মন মোহন ভূইয়া, পিতা- কৃষ্ণ মোহন ভূইয়া। পরে এই অবিকল নকল নিয়ে সেলিম মিয়া পুনরায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এল.এ শাখায় স্বরনাপন্ন হয়ে নকলটি ওই শাখার কর্মকর্তাদের দেখান। অবিকল নকলে তার দাদা ছমির উদ্দিন কাউকে এই জমি দান করেননি। এ অবস্থায় তাদের করনীর বিষয়ে জানতে চাইলে ওই শাখার সার্ভেয়ার তাদেরকে আইনী সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন।’
তিনি জানান, এ বিষয়ে সেলিম মিয়া বিল উত্তোলনকারী অলিউল্লা সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ জমি কিনে নিয়েছে বলে জানান। জমি ক্রয়ের বিষয়টি তার কাছে জানতে চাইলে সে সাব রেজিষ্ট্রার, এসিল্যান্ড, নায়েবের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেন তাদেরকে ।
‘অবশেষে উপায়ান্ত না দেখে সেলিম মিয়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।’
সৃজনকৃত উক্ত ১০৪৮৫/৭৩ দলিলের দাতা চাঁন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে তার বাড়িতে গেলে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
এসময় তার খোঁজ নিতে এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, ‘চাঁন মিয়া ফকির মানুষ। মাজারে মাজারে ঘুড়ে বেড়ায়। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি অনেক আগে বিক্রয় করে নিঃস্বত্ববান হয়েছেন সে।
ছমির উদ্দিন চাঁন মিয়াকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে কিনা এবিষয়ে জানতে চাইলে এলাকাবাসী জানান, ‘চাঁন মিয়াকে জমি দান করেছে বা ভোগ দখলে ছিল এই রকম তথ্য তাদের জানা নাই। তাকে কোন দিন ওই জমি চাষ করতে দেখেনি তারা। চাঁন মিয়ার বিক্রি করার মত কোন সম্পত্তি ছিলনা বলে জানান এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য অলিউল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জমির কাগজপত্র দেখেই তিনি তা ক্রয় করেছেন। তবে জাল দলিল করার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
উল্লেখ্য যে, বিল উত্তোলনকারী অলিউল্লা দলিলে সরকারী কর ফাঁকি দিয়ে আত্মীয় সম্পর্ক না থাকলেও বিল এওয়াজ হেবা দলিল করে। যা আইন বহির্ভূত। এর ফলে সরকারী স্বার্থ নষ্ট ও অধিক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে বঞ্চিত হয়েছেন জমির প্রকৃত মালিকরাও।
এব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে তাদের ন্যায্য পাওনা ফিরে পাওয়ার জোড় দাবী জানিয়ছেন অভিযোগকারী সেলিম মিয়া।
Leave a Reply